ঢাকা | বঙ্গাব্দ

রোম যখন পুড়ছিল, নিরো কি সত্যিই বাঁশি বাজাচ্ছিলেন?

৬৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে ছয়দিন ধরে জ্বলেছিল রোম শহর।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৭ জুন, ২০২৫
রোম যখন পুড়ছিল, নিরো কি সত্যিই বাঁশি বাজাচ্ছিলেন? ছবি : সংগৃহীত।

৬৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে ছয়দিন ধরে জ্বলেছিল রোম শহর। শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, গৃহহীন হয়ে পড়েছিলেন অর্ধেক নাগরিক। ঠিক সেই সময় নিয়ন্ত্রক রোমান সম্রাট নিরো—যার বিরুদ্ধে বরাবরই নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার অভিযোগ রয়েছে বিশদ। তাকে ঘিরে একটি বহুল প্রচলিত কথার উৎপত্তি: ‘রোম পুড়ছিল, আর নিরো বাঁশি বাজাচ্ছিলেন।’

এই কথাটি দুটি অর্থ বহন করে—প্রথমত, নিরো যেন সঙ্গীত পরিবেশন করছিলেন যখন তার প্রজারা দুর্ভোগে ছিলো; দ্বিতীয়ত, তিনি সংকটকালে একজন ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয় শাসকের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তবে এই কাহিনীর সত্যতা নিয়ে রয়েছে একাধিক জটিলতা।

প্রথমত, ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ‘ফিডল’ বা ‘বাঁশি’ নামক বাদ্যযন্ত্রটি রোমান যুগে ছিল না। সঙ্গীত ইতিহাসবিদদের মতে, এই যন্ত্রের উদ্ভব ঘটে ১১শ শতকের দিকে। যদি নিরো কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে থাকেনও, সেটি সম্ভবত হতো ‘সিথারা’ নামের কাঠের তৈরি একটি তারযুক্ত যন্ত্র। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ আজও পাওয়া যায়নি।

রোমান ইতিহাসবিদ ট্যাকিটাস লিখেছেন, নিরো আগুনের সময় রোম ধ্বংসের গল্প গাইছিলেন—এমন গুজব ছড়িয়েছিল। তবে তিনি নিজেই পরিষ্কার করে উল্লেখ করেছেন, এটি ছিল নিছক একটি গুজব, যার কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা পাওয়া যায়নি।

যখন রোমে আগুন লাগে, নিরো ছিলেন আনটিয়ামে। যেটা রোম শহর থেকে প্রায় ৩৫ মাইল দূরে তার ব্যক্তিগত বাসভবনে। আগুনের খবর পেয়ে তিনি রোমে ফিরে আসেন এবং পুনর্বাসন ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেন। তবে তবুও জনগণের মধ্যে সন্দেহ থেকেই যায়। অনেকেই মনে করেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই আগুন লাগিয়েছিলেন, কারণ তিনি পরবর্তীতে সেই পুড়ে যাওয়া এলাকাতেই গড়ে তোলেন তার ‘গোল্ডেন প্যালেস’ এবং আশপাশের বিলাসবহুল বাগান।

পরবর্তীতে নিরো খ্রিস্টানদের ওপর দোষ চাপান। খ্রিস্টধর্ম তখনও রোমে পরিচিত ছিল না। বহু খ্রিস্টানকে তিনি গ্রেপ্তার ও প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেন।

এই সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে ইতিহাসবিদদের মতে, ‘নিরো বাঁশি বাজাচ্ছিলেন’ কথাটি ইতিহাসের চেয়ে বেশি গুজব বা লোককথা। এটি একধরনের সাংস্কৃতিক প্রতীক, বাস্তবতার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় কল্পনা। সূত্র: হিস্টোরি, ব্রিটানিকা।

thebgbd.com/NA