পরীক্ষিত ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যেন মুহুর্তেই ধাঁধায় পড়ে গেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ইরানের সরাসরি পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর এখন বিস্মিত বিশ্ব। আধুনিক প্রযুক্তিতে গড়া ইসরায়েলের বহু স্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এমন পরাজয় দেখবে, তা কল্পনাও করেননি অনেক সামরিক বিশ্লেষকই।
ইসরায়েল এত কাল নিজেদের প্রতিরক্ষাবলয়ে গড়ে তুলেছে আয়রন ডোম, ডেভিডস স্লিং, অ্যারো-২ ও ৩, এবং বারাক-৮-এর মতো অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি। এর মধ্যে আয়রন ডোম স্বল্পপাল্লার রকেট ও মর্টার ঠেকাতে দক্ষ, ডেভিডস স্লিং ও অ্যারো সিরিজ ব্যালিস্টিক ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে, আর বারাক-৮ ব্যবহার হয় আকাশপথে আসা হুমকি মোকাবিলায়। বহু স্তরবিশিষ্ট এসব সিস্টেম একসঙ্গে কাজ করে আকাশপথে একটি দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরির লক্ষ্যেই।
কিন্তু ইরান এবার এসব প্রতিরক্ষা ভেদ করতে প্রযুক্তি ও কৌশলের এক অসাধারণ মিশ্রণ ব্যবহার করেছে। যা ছিল অসাধারণ। একইসঙ্গে কয়েকশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সংখ্যাগতভাবে চাপে ফেলে দেয় তারা। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে যে পরিমাণ ইন্টারসেপ্টর প্রয়োজন, সেই মজুত দ্রুত ফুরিয়ে যেতে থাকে।
এর পাশাপাশি ইরান ব্যবহার করে ফাত্তাহ-২ নামে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ দ্রুত এবং যার গতিপথ অনির্দেশ্য। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রচলিত রাডার ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম। শুধু তা-ই নয়, তারা পাঠায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও—যা নিচু দিয়ে উড়ে গিয়ে রাডার ফাঁকি দিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
ইরান কৌশলগতভাবে ভুয়া লক্ষ্যবস্তু পাঠিয়ে ইসরায়েলের রাডার ও প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ককে বিভ্রান্ত করেছে। ফলে আসল ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তুলনামূলক সহজেই লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায়। কিছু ক্ষেপণাস্ত্রে আবার এমন প্রযুক্তিও ছিল, যা রাডারের চোখ এড়িয়ে যায় কিংবা নিজেই রাডার ধ্বংস করতে সক্ষম।
এই পুরো আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা আকাশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং অধিকাংশ হামলা প্রতিহত করতে পেরেছে। তবে একইসঙ্গে তারা এটাও স্বীকার করেছে যে, সব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শতভাগ কার্যকর নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাত যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে দুপক্ষই অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতিতে পড়বে। বিশেষ করে ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহায়তা ছাড়া যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এই হামলার মাধ্যমে শুধু ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেনি, বরং গোটা বিশ্বের জন্য এক বার্তাও দিয়েছে—প্রযুক্তির দেয়াল যতই শক্ত হোক, কৌশলের ধারালো চাবি থাকলে তার তালাও খুলে ফেলা যায়।
তথ্য সূত্র: আল-জাজিরা