গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নোয়াখালীতে। বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে টানা ভারী বর্ষণে জেলা শহর ও নিম্নাঞ্চলে অধিকাংশ অংশ প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নোয়াখালী পৌরসভা এলাকাসহ বেশ কিছু নিচু এলাকা পানির নিচে চলে গেছে। কোথাও কোথাও রিকশা, অটো চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বহু বাসা-বাড়ি, দোকান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও রোগীদের চলাফেরায় মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে জেলা শহর ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিচতলায় বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে। ভবনের সামনেও প্রায় এক ফুট পানি জমে রয়েছে। এই পানির মধ্য দিয়েই সেবাপ্রার্থীরা কার্যালয়ে যাতায়াত করছেন। একই চিত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আশপাশেও। চারপাশে থই থই পানি। গণপূর্ত অফিসের সামনের নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক ৪ লেনের সড়কে জাল মেরে মাছ ধরছেন বাসিন্দারা। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহরের সরকারি আবাসিক এলাকার সড়ক (ফ্ল্যাট রোড) এবং প্রধান সড়কের পাশের বহু দোকানপাট। পানি ঢুকে পড়েছে সড়ক সংলগ্ন দোকানগুলোতে। এতে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে।
জেলা শহরের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম নিরব ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গতকাল বিকেল থেকে টানা বর্ষণে ঘর থেকে বের হওয়াই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। শহরের বেশিরভাগ ড্রেন উপচে পানি রাস্তায় চলে এসেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে পানি দ্রুত নামছে না।
জিহান উদ্দিন নামের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালীর রাস্তায় রাস্তায় এখন মানুষ মাছ ধরছে। গণপূর্ত অফিসের সামনে চার লেনের ব্যস্ত সড়কে জাল ফেলে, ড্রেনের মুখে কারেন্ট জাল বসিয়ে মাছ ধরছে লোকজন। এমন চিত্র কল্পনাও করা কঠিন। শহরের সড়কগুলোর অবস্থা এতটাই করুণ যে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে যায়। গত বছরের বন্যার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পরেও কোনো কার্যকর পরিকল্পনা বা দৃশ্যমান সংস্কার কাজ হয়নি।
জেলা আওহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১৩ তারিখ থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও গতকাল রাতে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এছাড়া সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী এক-দুই দিন এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
নোয়াখালী পৌরসভার দায়িত্বে থাকা পৌর প্রশাসক জালাল উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা আমাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে নোয়াখালীতে, যা শহরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিকে আরও প্রকট করে তুলেছে। তবে পানি নিষ্কাশনের কাজ আমরা দ্রুততার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছি।
thebgbd.com/NIT