ঢাকা | বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির মামলায় ইসলামী আন্দোলনের নেতা গ্রেপ্তার, বাদী বললেন ‘চিনি না’, পরে মুক্তি

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এক নেতা।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ জুন, ২০২৫
চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির মামলায় ইসলামী আন্দোলনের নেতা গ্রেপ্তার, বাদী বললেন ‘চিনি না’, পরে মুক্তি ছবি : সংগৃহীত ।

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এক নেতা। তবে মামলার বাদী থানায় এসে ওই নেতাকে চেনেন না বলে জানালে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনা ঘিরে থানা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।


শুক্রবার (২০ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে মোবাইল হারিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে থানায় যান ইসলামী আন্দোলনের চান্দগাঁও থানা শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এ সময় পুলিশ তাঁকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করে। ওই মামলার এজাহারে তাঁর নাম ৫ নম্বরে ছিল।


খবর ছড়িয়ে পড়লে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা রাতেই থানায় জড়ো হন। পরদিন সকালে যুব আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও থানার সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুরে মামলার বাদী মো. শিপন থানায় এসে জানান, তিনি হাবিবুর রহমানকে চেনেন না। এরপরই পুলিশ হাবিবুরকে তাঁর জিম্মায় ছেড়ে দেয়।


চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচলাইশ বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. আরিফ হোসেন বলেন, “যে ভিডিওর ভিত্তিতে মামলা হয়েছে, সেখানে হাবিবুর রহমানের চেহারা নেই। বাদীও তাঁকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন। তাই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”


দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, থানার মূল ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা দাবি করেন, উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই হাবিবুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ তখন সাংবাদিকদেরও থানা চত্বরে প্রবেশে বাধা দেয়।


বিক্ষোভকারীরা বলেন, গত এপ্রিল মাসে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা সমাবেশ করেন। এরপর থেকে চাঁদাবাজির ঘটনা কমে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একটি পক্ষ হাবিবুর রহমানকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করছে। তাঁদের দাবি, মামলার বাদী পক্ষই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।


বেলা ১টার দিকে মামলার বাদী ও দুই সাক্ষী থানায় উপস্থিত হলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।


চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজী মনিরুল করিম বলেন, “হাবিবুর রহমানের নাম এজাহারে ছিল। তবে বাদী তাঁকে চেনেন না জানানোয় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”


থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মামলায় হাবিবুর রহমানসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে হাবিবুর ছাড়া বাকি পাঁচজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এরা হলেন— মো. নয়ন (৩৫), মো. লোকমান (২৮), মো. ফয়সাল হোসেন (৩২), মো. শাহীন (২১) ও সনজিত নাথ (৪৯)। তবে হাবিবুরকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ওসির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।


এ বিষয়ে নাগরিক সংগঠন ‘সুজন’-এর চট্টগ্রাম সম্পাদক ও আইনজীবী আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, “কাউকে নির্দোষ মনে হলে আদালতে প্রমাণ হওয়া উচিত। থানা ঘেরাও করে কাউকে ছাড়িয়ে নেওয়া আইনের শাসনের জন্য ভালো দৃষ্টান্ত নয়। এতে অন্য আসামিরাও একই কৌশলে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।”


তিনি আরও বলেন, “গ্রেপ্তারের পর কাউকে থানা থেকে ছেড়ে দিলে তার পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতে হয়। একজনকে ছেড়ে দেওয়া হলে অন্য পাঁচজনকে কেন আদালতে পাঠানো হলো, সেটিও প্রশ্নের জন্ম দেয়। পাশাপাশি ভুল এজাহার দেওয়ার জন্য বাদীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”



thebgbd.com/NA