ঢাকা | বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের আগে ফ্যাসিস্টদের অবশ্যই বিচার হবে: আইন উপদেষ্টা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৮ জুলাই, ২০২৫
নির্বাচনের আগে ফ্যাসিস্টদের অবশ্যই বিচার হবে: আইন উপদেষ্টা ফাইল ছবি

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আজকে বিচার নিয়ে নানা প্রশ্ন আসছে। নিশ্চিত করে বলতে পারি, বিচারব্যবস্থা পূর্ণ গতিতে চলছে, বিচার পূর্ণমাত্রায় দৃশ্যমান আছে। আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, নির্বাচনের আগে ফ্যাসিস্টদের অবশ্যই বিচার হবে। সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ২০২৪ এর জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত আরিফুর রহমান পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’ (জুলাই আপরাইজিং) এর প্রিমিয়ার শো উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।


তিনি বলেন, আমাদেরকে বিচারব্যবস্থাটা গ্রহণযোগ্য করতে হবে। তাই আপনারা নিশ্চিত থাকেন, আপনাদের হতাশ হওয়ার কারণ নাই। আমরা যখন সরকারের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন চিন্তা ছিল, বিচারের কথা, সংস্কারের কথা, জুলাইয়ের শহীদদের পুনর্বাসনের কথা এবং নির্বাচনের কথা। আমাদের বিচারটা গ্রহণযোগ্য করতে হবে।


আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট দলের লোকজন হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে এই বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে। এই বিচার প্রক্রিয়া তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করবে। বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। তাই আমরা সর্বোচ্চমানের শ্রেষ্ঠ একটা বিচার করতে চাইছি।


তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের জুলাই কখনো বেহাত হবে না। অনেক কিছু বলতে পারছি না। শুধু বলব আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নাই।


আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আন্দোলনে একটা স্লোগানের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে সবার, ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়; বাংলা কি তোর বাপদাদার।’ এই দেশ বাংলাদেশ আমাদের সবার। জুলাই আসলে জুলাইয়ের কথা বেশি করে মনে পড়ে। চোখের সামনে ভেসে উঠে ছোট ভাইয়ের লাশ নিয়ে দুই বোন মিছিল করছে, এপিসি থেকে ইয়ামিনের দেহটা ফেলে দিচ্ছে; তখনো সে মরে যায়নি। তাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে, একজন মা পানি বিলি করছে, মাদ্রাসার ছেলেরা লড়াই করছে। কিছু রিকশাচালক ভাই সিটের উপরে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে– আমার মনে হয় না, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোনো মহাকাব্যিক ঘটনা ঘটেছে।


তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়’র মা শামসি আরা জামান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেন, বিগত ১৬ বছরে দেশের জনসাধারণ নিপীড়ন, হত্যা, গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। আমরা ফ্যাসিবাদীদের উৎখাত করেছি। জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বারবার নানা অনুষ্ঠান করতে হবে।


তিনি বলেন, যারা অধিকার আদায়ে শহীদ হয়েছেন ও শহীদ পরিবারের সবার যে ভূমিকা রয়েছে সেসব স্মৃতিকে সবার মধ্যে বারবার মনে করিয়ে দিতে এবং এক্ষেত্রে আমাদের কি দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করে দিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান বেশি করতে হবে।


ফ্যাসিবাদের উৎখাতে এ ধরনের অনুষ্ঠান উৎসাহ ও প্রেরণা জোগাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,শুধু জুলাই মাস নয় প্রতিমাসেই শহীদদের স্মরণ করব এবং প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের স্মরণ করে যাব। আমাদের অনেক অর্জন আছে, আবার কাঙ্ক্ষিত আকাঙ্ক্ষার কাছাকাছি যেতে পারিনি। এই লড়াইয়ের ইতিহাস দীর্ঘ, অনেক দিনের লড়াই। এই লড়াইয়ের ইতিহাস এক বছর, দুই বছর নয়।


মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলন আসলে ৩৬ দিনের আন্দোলন নয়, এটা ৫৪ বছরের আন্দোলন। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ঠিকই মাঝে ৫-৭ বছর মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছে কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে সেসময়টা বেশিদিন পাওয়া যায়নি।


তিনি বলেন, এখন প্রধান কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিকভাবে জবাব দেওয়া। নতুন কিছু সৃষ্টির চিন্তা করছি। এসময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সত্যের পক্ষে আছি। ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করতে চাইছে। জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সত্য আমাদের চোখের সামনে যেভাবে ঘটেছে। যেসব ঘটনা ঘটেছে সেসবগুলোকে ইনটেলেকচুয়াল ফ্রেমের মধ্যে আনতে হবে। এটাকে ব্যাখ্যার মধ্যে আনতে হবে। সত্যের পক্ষে মানুষ বেশি।


উপদেষ্টা বলেন, আমি অনেক শহীদ পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা আন্দোলন করেছে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের স্লোগানকে দেখেন, তরুণদের মুখের অভিব্যক্তি দেখেন, তাদের মূল কথাটা ছিল, তারা আর কারো অধীনে থাকতে চায় না। এটা গুরুত্বপূর্ণ।



আদিলুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসতে চাইবে। তাদের দমন করতে হবে, তাদের ঠেকাতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত ছিল। নতুন যে প্রজন্ম গড়ে উঠবে তাদের যেন এ ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে না হয়।


তিনি বলেন, আমরা কখনোই মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে দেব না। আমরা ফ্যাসিবাদের যেন পুনরুত্থান না হয় তা নিশ্চিত করব। বাংলাদেশ যে ফ্যাসিবাদকে কবর দিয়েছে সে কবর যেন আর মাথা তুলতে না পারে।


শহীদ আবু সাঈদের বাবা মো. মকবুল হোসেন বলেন, আমার ছেলে চলে গেছে এক বছর পূর্ণ হলো। আমার ছেলেসহ শহীদদের হত্যার বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি। আমি দ্রুত এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।


তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)’র মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তথ্যচিত্রটি প্রযোজনা করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।


thebgbd.com/NIT