ঢাকার কাওলা, খিলক্ষেত, কুড়িল কিংবা চট্টগ্রামের মিরসরাই—একটির পর একটি দুর্ঘটনা যেন প্রমাণ করে, রেললাইনের পাশে জীবন আজ অনিরাপদ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্তেই কয়েকটি করুণ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নারী, যুবক ও বৃদ্ধ। কারও মৃত্যু হয়েছে রেললাইন পার হওয়ার সময়, কেউবা প্রাণ হারিয়েছেন শুধু একটি ছবি তুলতে গিয়ে।
এ চিত্র নতুন নয়—এটি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসতর্কতা, আইন অমান্য করা, কিংবা অবৈধ রেলক্রসিং—এসব কারণেই প্রতিদিন রেলপথ কেড়ে নিচ্ছে নিরীহ মানুষের প্রাণ।
অরক্ষিত রেলক্রসিং: একেকটি যেন মৃত্যুফাঁদ
বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিসংখ্যান বলছে:
দেশে মোট ২,৮৫৬টি রেলক্রসিং রয়েছে।
এর মধ্যে ১,৩৬১টি সম্পূর্ণ অনুমোদনহীন।
অনুমোদিত ১,৪৯৫টি ক্রসিংয়ের মধ্যে প্রায় ৬৩২টিতেই নেই কোনো গেটম্যান।
মাত্র ২৪২টিতে রেলের স্থায়ী রক্ষী রয়েছে, বাকিগুলোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা।
ফলে এসব রেলক্রসিং অনেক সময়ই ট্রেন চলার সময় খোলা থাকে। পথচারী, মোটরসাইকেল আরোহী কিংবা রিকশাচালকেরা প্রায়ই বেপরোয়াভাবে রেললাইন পার হন—সেই অসচেতনতার মাশুল দিতেই হয় জীবন দিয়ে।
ভয়াবহ পরিসংখ্যান
প্রতিবছর রেলক্রসিং দুর্ঘটনার সংখ্যা: ২০০+
গত চার বছরে প্রাণহানি: ১,০০০+
আহত/পঙ্গু: ১,৫০০+
১৬ বছরে লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনায় মৃত্যু: ৬৫০ জন
রেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ৮৯% ঘটছে লেভেল ক্রসিংয়ে
আইন আছে, বাস্তবায়ন নেই
বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুট এলাকা সবসময় ১৪৪ ধারা জারি হিসেবে গণ্য। সেখানে দাঁড়ানো, চলাফেরা বা বসবাস আইনত অপরাধ। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই আইন সম্পর্কে জানেই না। ফলে রেলপথকে হেঁটে পার হওয়া বা সেলফি তোলা এখন নৈমিত্তিক বিষয়।
করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মৃত্যুমিছিল থামাতে হলে চাই—
সব রেলক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান নিশ্চিত করা
সচেতনতামূলক প্রচারণা বাড়ানো
আইনের বাস্তব প্রয়োগ
ডিজিটাল রেলক্রসিং ব্যবস্থার প্রসার
স্কুল-কলেজে রেলসচেতনতা শিক্ষা
রেলপথ হওয়া উচিত ছিল নিরাপদ যাত্রার প্রতীক। কিন্তু বাংলাদেশে অসচেতনতা আর অব্যবস্থাপনার কারণে তা রূপ নিয়েছে মৃত্যুর রাস্তায়। এখন সময় এসেছে কেবল পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি প্রাণকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার। একটি ফোন ধরতে গিয়ে, একটি ছবি তুলতে গিয়ে কিংবা গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া—এর কোনোটি যেন আর কারও শেষ গন্তব্য না হয়।
thebgbd.com/NIT