দেশজুড়ে টানা ভারী বৃষ্টির কারণে জনজীবন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে নিচু এলাকা গুলোতে পানিবন্দি মানুষ ও জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক জায়গায় সড়ক তলিয়ে গেছে, ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের পানির নিচে তলিয়ে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া খবরের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
ফেনী
মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরামের ৩০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক উপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত, নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেনীতে ২৪ ঘণ্টায় ৪৪১ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি
দুইদিন ধরে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি, নদীর পানি বেড়ে শহরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়া, কালাডেবা ও গরুর বাজার পানিতে ডুবে গেছে।
কক্সবাজার
সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতা, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে লক্ষাধিক মানুষ বিপাকে। উখিয়া ও টেকনাফসহ ৯টি উপজেলায় জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৭৮৭ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।
টাঙ্গাইল
যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই ও বংশাই নদীর পানি বাড়ছে, তবে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাতক্ষীরা
এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত, ফসলি জমি, মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় ১০২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
খুলনা
ভারী বৃষ্টিতে নগরী ও গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে গেছে, ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনে অসুবিধা ও যান চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বান্দরবান
টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীরা বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সাঙ্গু অববাহিকায় ১০১ মিমি ও মাতামুহুরী অববাহিকায় ৬৭ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
রাজশাহী
নদীপাড়ে ভারত থেকে বন্যার পানি নেমে আসায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মার চরখিদিরপুর এলাকায় বন্যা প্রবেশ করেছে। নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইদহ
আষাঢ়ের ভারী বৃষ্টিতে শহর ও গ্রামীণ এলাকা জলাবদ্ধ, কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত। যান চলাচলে সমস্যা, মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে রয়েছে।
মোংলা
টানা বৃষ্টিতে পৌর শহরসহ ৬ ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত। ঘরবাড়ি, রাস্তা ও পুকুর ডুবে গেছে। পানি নিষ্কাশনে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
নোয়াখালী
২৪ ঘণ্টায় ২২৩ মিমি বৃষ্টিপাত, সদর ও কয়েকটি উপজেলায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে।
কুমিল্লা
দুই দিনের বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান সড়ক ও অলিগলি তলিয়ে গেছে। ব্যবসা-রোজগার ও জনজীবন স্থবির।
বরিশাল
চার দিনের বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা, অফিস-আদালত ও স্কুলে যাতায়াত কঠিন হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বলতা নিয়ে নগরবাসীর ক্ষোভ।
লক্ষ্মীপুর
তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে নিচু এলাকা ও রাস্তাঘাট প্লাবিত, পুকুর ভেসে মাছ বেরিয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় শহর ও আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ।
দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও অনেক স্থানে নদীর পানি বৃদ্ধি ও বন্যার আশঙ্কা।
নিচু এলাকা ও শহরগুলোতে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
যান চলাচল ব্যাহত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।
দ্রুত কার্যকর পানি নিষ্কাশন, বাঁধ মেরামত, জনসচেতনতা ও সঠিক ত্রাণ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিপর্যয় মোকাবেলা প্রয়োজন।
thebgbd.com/NIT