দারুচিনি—প্রাচীনকাল থেকে নানা রোগের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত একটি মসলা। আজকের দিনে ওজন কমানোর জন্যও দারুচিনির কার্যকারিতা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, দারুচিনি কি আসলেই ওজন কমাতে সাহায্য করে? চলুন, এর বৈজ্ঞানিক দিক ও ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
দারুচিনিতে রয়েছে পলিফেনল জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সাইনামালডিহাইড নামক যৌগ, যা শরীরের বিপাক বা মেটাবলিজম বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বিপাক বাড়লে শরীরের ক্যালোরি দাহের হার দ্রুত হয়, ফলে ওজন কমানো সহজ হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এই প্রক্রিয়ায় শরীর অতিরিক্ত মিষ্টি বা ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমায়, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক।
তবে শুধুমাত্র দারুচিনি খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব নয়। ওজন কমাতে প্রয়োজন সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম। দারুচিনি একটি সম্পূরক হিসেবে কাজ করে, যা আপনার প্রচেষ্টাকে আরও ফলপ্রসূ করে তোলে। এ ছাড়া, দারুচিনি পেটে ভরাটি অনুভূতি বৃদ্ধি করে, ফলে খাবারের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়।
দারুচিনি খাওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়—দিনে এক থেকে দুই চা চামচ গুঁড়া দারুচিনি গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়ার। এটি সকালে খাওয়া সবচেয়ে ভালো, কারণ এটি দিনব্যাপী মেটাবলিজম চালু রাখতে সাহায্য করে। তবে দারুচিনির অতিরিক্ত ব্যবহার কিডনি ও লিভারে চাপ দিতে পারে, তাই অবশ্যই পরিমিতভাবে গ্রহণ করতে হবে।
অনেক সময় বাজারে পাওয়া সস্তা বা ভেজাল দারুচিনি ব্যবহারে স্বাস্থ্যে সমস্যা হতে পারে। সেজন্য খাঁটি ও বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে দারুচিনি সংগ্রহ করা উচিত। এছাড়া, যাদের যকৃতের সমস্যা বা গর্ভবতী নারী তাদের দারুচিনি গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
সুতরাং, দারুচিনি একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে, কিন্তু এটি একক উপায় নয়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে দারুচিনি যুক্ত করলে আপনি নিজেই তার সুফল দেখতে পাবেন। সর্বোপরি, যেকোনো ধরনের ডায়েট বা স্বাস্থ্য পরিকল্পনার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই নিরাপদ ও বুদ্ধিমানের কাজ।
https://thebgbd.com/BYB