স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতচিহ্ন এখনো শুকায়নি, তার মধ্যেই ফের ভয়াবহ দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফেনী জেলা। মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে নতুন করে ৩৬টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে, যার ফলে অন্তত পাঁচ উপজেলার শতাধিক গ্রামে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি।
গত ৮ জুলাই থেকে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, প্লাবিত হয়েছে অন্তত ১১২টি গ্রাম; আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৯ হাজার ৫০০ মানুষ।
দুর্বল বাঁধ নির্মাণে ক্ষোভ, প্রশ্ন জবাবদিহি নিয়ে
স্থানীয়দের অভিযোগ, গেল বছরের ভয়াবহ বন্যার পর প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে যেসব বাঁধ মেরামত করা হয়েছিল, সেগুলো এবারও টিকলো না। একই স্থানে আবারও ভাঙন, আগাম সতর্কতার ঘাটতি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেরিতে সাড়া দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ বানভাসি মানুষ।
পরশুরামের বাসিন্দা মাসুম বলেন, “বাঁধ ভাঙনের চারদিনেও পাউবো’র কাউকে দেখা যায়নি। এবার আর আশ্বাস নয়, চাই টেকসই বাঁধ।”
ফুলগাজীর খামারি হারুন বলেন, “গতবারও সব হারালাম, এবারও মাছের ঘের ও মুরগির খামার ভেসে গেছে।”
ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
জেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়,
মৎস্য খাতে ক্ষতি: প্রায় ৮ কোটি ১২ লাখ টাকা
কৃষিতে ক্ষতি: ৫,৫৬৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট
প্রাণিসম্পদে ক্ষতি: প্রায় ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা
প্রশাসনের ভাষ্য ও প্রস্তুতি
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন মজুমদার জানান, “প্রথমে এলাকাভিত্তিক তথ্য পেলেও সরেজমিনে গিয়ে ৩৬টি ভাঙনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। পানি নেমে গেলে মেরামত কাজ শুরু হবে।”
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “ত্রাণ কার্যক্রমে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীসহ সব সংস্থা সমন্বয়ে কাজ করছে।”
উল্লেখ্য, গত বছর জুলাই-আগস্টে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জনের মৃত্যু হয় ও শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এবারও একই চিত্র। স্থানীয়দের দাবি—কেবল বরাদ্দ নয়, চাই প্রকৃত জবাবদিহি ও স্থায়ী সমাধান।
thebgbd.com/NIT