জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা আজ রোববার উচ্চকক্ষ নির্বাচনে ভোটের সম্মুখীন হচ্ছেন। এই নির্বাচনে তার প্রধানমন্ত্রীত্ব শেষ হয়ে যেতে পারে। মূল্যবৃদ্ধি, বিশেষ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক জাপানি ক্ষুব্ধ। জনমত জরিপে দেখা গেছে যে, ইশিবার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট এই নির্বাচনে উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে।
এর আগে গত অক্টোবরে নিম্নকক্ষে নির্বাচনেও ইশিবার জোট পরাজিত হয় এবং তাকে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হয়। এই নির্বাচনের ফল তার জন্য শেষ ধাক্কা হতে পারে। ডোশিশা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশ্লেষক তোরু ইয়োশিদা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ইশিবাকে পদত্যাগ করতে হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাপান এমন এক অজানা পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে, যেখানে সরকার দুই কক্ষেই সংখ্যালঘু থাকবে। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনো হয়নি।’
শিগেরু ইশিবার নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ১৯৫৫ সাল থেকে প্রায় একটানা দেশ পরিচালনা করছে, যদিও নেতৃত্বে বারবার পরিবর্তন হয়েছে। ৬৮ বছর বয়সী ইশিবা নিজেকে প্রতিরক্ষা বিষয়ক ‘অনুরাগী’ ও ট্রেনপ্রেমী হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি গত সেপ্টেম্বরে পঞ্চমবারের চেষ্টায় এলডিপি’র নেতৃত্বে আসেন এবং দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের ডাক দেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত উল্টো ফল দেয়। নির্বাচনে এলডিপি ও তাদের ছোট জোটসঙ্গী ‘কোমেইতো’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এবং বিরোধীদের সহায়তা ছাড়া আইন পাস করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
উচ্চকক্ষে মোট ২৪৮টি আসনের মধ্যে ১২৫টি আজ ভোটে নির্ধারিত হবে। জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে হলে কমপক্ষে ৫০টি আসনে জয় প্রয়োজন। নানা কারণেই ইশিবার জন্য পরিস্থিতি কঠিন। এর মধ্যে রয়েছে এলডিপি’র তহবিল কেলেঙ্কারি আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না হলে, ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া ২৫ শতাংশ মার্কিন শুল্কের হুমকি।
জাপানের বিশাল গাড়ি শিল্প ইতোমধ্যে শুল্কের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ইশিবা ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার বাণিজ্য দূতকে সাতবার ওয়াশিংটনে পাঠানো হলেও এখনও কোনো সমঝোতা হয়নি। ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসাহিসা এন্দো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় সরকারের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে জনগণের মধ্যে এলডিপি’র বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়তে পারে।’
উচ্চকক্ষে এলডিপি ও কোমেইতো সর্বশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ২০১০ সালে। তার আগে ২০০৭ সালেও তারা একই পরিস্থিতিতে পড়ে। এরপর ২০০৯ সালে বিরলভাবে সরকার পরিবর্তন হয় এবং বর্তমানে বিলুপ্ত ‘ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ জাপান’ তিন বছরের জন্য সরকার গঠন করে। তবে এবার বিরোধীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে বিকল্প সরকার গঠনের সম্ভাবনা কম।
এমন পরিস্থিতিতে যেসব দল এগিয়ে আসছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ‘জাপানিজ ফার্স্ট’ সানসেইতো। জনমত জরিপ বলছে, তারা এবার উচ্চকক্ষে ১০টির বেশি আসন পেতে পারে, যেখানে বর্তমানে তাদের আসন সংখ্যা মাত্র দুই। দলটি অভিবাসনের ওপর ‘কঠোর নিয়ম ও সীমা’ চায় এবং ‘বিশ্বায়ন ও ‘উগ্র’ লিঙ্গনীতির বিরোধিতা করে। পাশাপাশি তারা জলবায়ু পরিবর্তন ও টিকা নিয়ে নতুন করে বিবেচনা করার দাবি জানায়।
সূত্র: এএফপি
এসজেড