ঢাকা | বঙ্গাব্দ

‘বড় সন্তানকে বের করতে পেরেছি, ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২১ জুলাই, ২০২৫
‘বড় সন্তানকে বের করতে পেরেছি, ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না’ মাইলস্টোন স্কুলে সন্তানের খোঁজে অভিভাবকেরা

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গোটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানজুড়ে চলছে স্বজনহারা মানুষের আহাজারি। কেউ সন্তানকে খুঁজে পেয়েছেন, কেউ এখনো খুঁজছেন অজানা আশঙ্কা আর আতঙ্ক নিয়ে।


আজ সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়নের কিছু পরই দেড়টার কাছাকাছি সময় কলেজের প্রজেক্ট-২ ভবনের সামনে বিধ্বস্ত হয় এবং মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। ভবনটি ছিল দোতলা, যেখানে প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলত।


ঘটনার ভয়াবহতা


প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী মাহিম হাসান সিয়াম জানান, বিমানটি প্রথমে প্রজেক্ট-৭ ভবনের গায়ে ধাক্কা খেয়ে জ্বালানির লিকেজ ঘটায়। এরপরই এটি প্রজেক্ট-২ ভবনের সামনে পড়ে যায়। সিয়াম বলেন, ভবনটিতে ছিল ১৬টি শ্রেণিকক্ষ এবং ৪টি শিক্ষক রুম। দুর্ঘটনার সময় ক্লাস শেষ হওয়ার মুখে ছিল। অনেক শিক্ষার্থী তখনও ভেতরে ছিল, কেউ কেউ বেরিয়ে গিয়েছিল।


অভিভাবকদের কান্না ও উদ্বেগ


ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই অভিভাবকেরা দৌড়ে আসেন ক্যাম্পাসে। কেউ সন্তানকে খুঁজে পেয়েছেন, কেউ সন্তানকে হারানোর আশঙ্কায় বাকরুদ্ধ।


লাকি আক্তার নামের এক মা বলেন, ‘বড় সন্তানকে বের করতে পেরেছি। ছোটটাকে খুঁজে পাচ্ছি না।’ ফেরদৌসী বেগম জানালেন, তাঁর মেয়ে ভবনের ভেতরেই ছিল। এখনো কোনো খোঁজ পাননি।


আহতদের অবস্থা ও চিকিৎসা


ফায়ার সার্ভিস সূত্রে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বার্ন ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অন্তত ২৮ জন দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন। আরও অনেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


উদ্ধার তৎপরতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা


ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযানে নামে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।


চোখের সামনে ভয়াবহতা


মাইলস্টোন কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. সবুজ মিয়া জানান, দুপুর ১টার দিকে ক্লাস শেষ হয়েছিল। অনেকে তখনো অভিভাবকদের জন্য অপেক্ষা করছিল। সেই সময়েই দুর্ঘটনাটি ঘটে।


এই ট্র্যাজেডি গোটা দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ভয়াবহ মৃত্যু দৃশ্য—কেবল কল্পনাতেই ছিল এতদিন। আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এখন সবার কণ্ঠে একই প্রার্থনা—আর যেন কোনো শিশু না হারায়, আর যেন এমন শোক বইতে না হয় কোনো পরিবারকে।


thebgbd.com/NIT