সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে থাইল্যান্ড ও ক্যাম্বোডিয়ার মধ্যে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ক্যাম্বোডিয়ার একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। উভয় দেশই এ হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই উত্তেজনায় ইতোমধ্যে এক শিশুসহ অন্তত ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এফ-১৬ বিমান দিয়ে কম্বোডিয়ার একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গুলি ছোড়া হয়েছে এবং তা ধ্বংস করা হয়েছে। দুই দেশই বৃহস্পতিবার ভোরে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে। থাই সেনাবাহিনীর উপ-মুখপাত্র রিচা সুকসুয়ানোন বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান শক্তি ব্যবহার করেছি।’ একই সঙ্গে থাইল্যান্ড তাদের ক্যাম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে ক্যাম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, থাই যুদ্ধবিমান দুটি বোমা ফেলে একটি রাস্তায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এক বিবৃতিতে দেশটি জানায়, ‘থাইল্যান্ড কর্তৃক ক্যাম্বোডিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ওপর এই বেপরোয়া ও নির্মম সামরিক আগ্রাসনের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’
থাইল্যান্ড বুধবার রাতে ক্যাম্বোডিয়া থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে এবং ব্যাঙ্ককে ক্যাম্বোডিয়ান দূতকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেওয়া দিয়েছে। এর আগে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আরও একজন থাই সেনা ভূমিমাইন বিস্ফোরণে পা হারান। থাইল্যান্ড দাবি করেছে, ভূমিমাইনটি সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্বোডিয়া পুঁতে রেখেছে।
থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্যাম্বোডিয়ান সেনারা বৃহস্পতিবার সকালে থাই সামরিক ঘাঁটির ওপর ‘ভারী কামান হামলা’ চালিয়েছে এবং একটি হাসপাতালসহ বেসামরিক এলাকাও টার্গেট করেছে, যাতে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
এক বিবৃতিতে থাই সরকার জানায়, ‘যদি ক্যাম্বোডিয়া আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে সশস্ত্র আক্রমণ চালাতে থাকে, তাহলে থাইল্যান্ড আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ জোরদার করতে প্রস্তুত।’ থাইল্যান্ডের সুরিন সীমান্ত প্রদেশে শিশু ও বৃদ্ধসহ বাসিন্দারা বালুর বস্তা ও টায়ার দিয়ে তৈরি করা কংক্রিটের বাংকারে আশ্রয় নেন।
ক্যাম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থাইল্যান্ডের এই বিমান হামলাকে ‘উস্কানিমূলক ও অযৌক্তিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং থাই বাহিনীকে সীমান্ত থেকে প্রত্যাহার করে নিতে ও ভবিষ্যতে এমন উত্তেজনাকর আচরণ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে।
১৮৭০-এর দশক থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বিভিন্ন অনির্ধারিত অংশ নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এর ফলে অনেকবার সংঘর্ষ হয়েছে এবং বহু প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে ২০১১ সালের এক সপ্তাহব্যাপী কামান লড়াই অন্যতম। গত মে মাসে এক ক্যাম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যুর মাধ্যমে এ উত্তেজনার নতুন সূচনা হয়। সেই ঘটনা পরে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সংকটে রূপ নেয় এবং এখন তা সশস্ত্র সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে।
সর্বশেষ সংঘর্ষ শুরু হয় বৃহস্পতিবার ভোরে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত তা মোয়ান থম মন্দির সংলগ্ন একটি বিরোধপূর্ণ এলাকায়। থাই সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সীমান্তের তিনটি প্রদেশে এখন পর্যন্ত নয়জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে সুরিনে আট বছর বয়সী এক শিশু রয়েছে।
সূত্র: থাই টাইমস
এসজেড