ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তারা আগামী রোববার স্কটল্যান্ডে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন। যার লক্ষ্য হবে, আটলান্টিকের দুই পাড়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য অচলাবস্থার অবসান ঘটানো। ব্রাসেলস থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
নিজ দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, আগস্টের ১ তারিখের মধ্যে সমঝোতা না হলে তিনি বহু দেশের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেবেন। ইইউ বর্তমানে ৩০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের হুমকির মুখে রয়েছে এবং চুক্তির লক্ষ্যে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে আলোচনা ব্যর্থ হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে।
ভন ডার লিয়েন প্রথমে বৈঠকের ঘোষণা দিয়ে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ ফোনালাপের পর আমরা রোববার স্কটল্যান্ডে দেখা করার এবং ট্রান্স-আটলান্টিক বাণিজ্য সম্পর্ক ও তা শক্তিশালী রাখার উপায় নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শুক্রবার রাতে যুক্তরাজ্যে পৌঁছে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, রোববার ইইউর সঙ্গে বৈঠক করব এবং আমরা একটি চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করব। উরসুলাও সেখানে থাকবেন, উনি অত্যন্ত সম্মানিত নারী। তাই আমরা এটা নিয়ে আশাবাদী। দেখা যাক আমরা কোনও চুক্তিতে পৌঁছাতে পারি কিনা। চুক্তির সম্ভাবনা ‘ফিফটি-ফিফটি’। কারণ এখনো ২০টির মত বিষয়ে মতানৈক্য রয়ে গেছে।
ট্রাম্প বলেন, যদি করা সম্ভব হয়, তবে এটি হবে সবচেয়ে বড় চুক্তি। উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকটি গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক আলোচনা এবং সাম্প্রতিক কয়েক দিনের ইতিবাচক কথাবার্তার পর হতে যাচ্ছে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকদের মতে, আলোচিত প্রস্তাব অনুযায়ী ইইউ পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করতে পারে, যা এই সপ্তাহে জাপানের সঙ্গে করা চুক্তির সমান। এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর জন্য কিছু ছাড়ও দেওয়া হতে পারে।
ভন ডার লিয়েনের মুখপাত্র পাওলা পিনহো জানান, রোববারের বৈঠকের আগে রাজনৈতিক ও কারিগরি পর্যায়ে ‘নিবিড় আলোচনা’ চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন নেতারা আলোচনা সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধানের পথে অগ্রসর হবেন, যা আটলান্টিকের উভয় পাশে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য পূর্বাভাসযোগ্যতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
‘ট্রাম্পের হাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’
ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইইউ একাধিক শুল্কের মুখে পড়েছে। বর্তমানে ইউরোপীয় গাড়িতে ২৫ শতাংশ, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ৫০ শতাংশ এবং সাধারণ পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। তবে কোন চুক্তি না হলে তা ৩০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। ইইউ এই বাড়তি শুল্ক এড়াতে চায়, কারণ তা ইউরোপের মন্দাগ্রস্ত অর্থনীতিতে এটি নতুন আঘাত হানতে পারে। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বছরে ১.৬ ট্রিলিয়ন ইউরো (১.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের পণ্য ও সেবা বাণিজ্য রয়েছে।
ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপীয় কমিশনকে চুক্তির আলোচনার ক্ষমতা দিয়েছে, যদিও আলোচনায় ব্যর্থ হলে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে। চাপ বজায় রাখতে ইইউ রাষ্ট্রগুলো গত বৃহস্পতিবার ৯৩ বিলিয়ন ইউরো (১০৯ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের মার্কিন পণ্যে প্রতিশোধমূলক শুল্কের একটি প্যাকেজ অনুমোদন করে। যদি সমঝোতা না হয়, তবে এই শুল্ক আগামী ৭ আগস্ট থেকে ধাপে ধাপে কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই ১৫ শতাংশ শুল্ক মেনে চুক্তি করতে রাজি। তবে বিমান, ইস্পাত, কাঠ, ওষুধ ও কৃষিপণ্যসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে তারা ছাড় চায় বলে কূটনীতিকরা জানিয়েছেন। ইস্পাতের ক্ষেত্রে সমঝোতায় একটি নির্দিষ্ট কোটা যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশ করতে পারে, কোটা ছাড়ালে ৫০ শতাংশ কর বসবে।
ট্রাম্প প্রশাসন এখন পর্যন্ত ব্রিটেন, জাপান এবং ফিলিপাইনের মত কয়েকটি দেশের সঙ্গে মাত্র পাঁচটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যদিও ইইউ একটি চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী, তবে ১ আগস্টের ডেডলাইন নিয়ে শঙ্কাও রয়েই গেছে। এই মাসের শুরুতেও ইইউ কর্মকর্তারা চুক্তির দ্বারপ্রান্তে বলে ধারণা পোষণ করেন। পরে ট্রাম্প হঠাৎ করেই শুল্ক ৩০ শতাংশ করার হুমকি দিয়ে আবারো পরিস্থিতি জটিল করে তোলেন। চলতি সপ্তাহে এএফপিকে এক ইইউ কূটনীতিক বলেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে।’
সূত্র: এএফপি
এসজেড