ঢাকা | বঙ্গাব্দ

চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস কমে নাই, রাজনৈতিক পরিচয়ে ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে: রেজাউল করীম

পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, ১৫ বছরের পতিত ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোঁয়া এখনো দেশকে অনিরাপদ করে রেখেছে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ জুলাই, ২০২৫
চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস কমে নাই, রাজনৈতিক পরিচয়ে ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে: রেজাউল করীম ফাইল ছবি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না; জবাবদিহিমূলক সরকার কায়েম হবে। একটি সুন্দর দেশ গঠন হবে। জবাবদিহিতার অভাবেই ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হ্রাস পাবে এবং সংলাপের সংস্কৃতি সৃষ্টি হবে। তাছাড়া প্রতিটি ভোটের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সকল দল-মতের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার তৈরি হবে।


আজ শনিবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১ টায় ঐতিহাসিক বাবরী চত্বরে ( শিববাড়ি) বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে রক্ষার জন্য রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করা, পতিত ফ্যাসিবাদের সাথে জড়িতদের বিচার দ্রুততার সাথে নিশ্চিত করা, সংখ্যানুপাতিক (পিআর ) পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, বন্ধ মিল কলকারখানা চালু ও ইসলামী ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।


ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর সভাপতি ও খুলনা ২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলহাজ্ব মুফতী আমানুল্লাহ-র সভাপতিত্বে ও নগর সহসভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, জেলা সেক্রেটারি হাফেজ আসাদুল্লাহ আল গালিব ও মহানগর সেক্রেটারি খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুফতি ইমরান হোসাইন এর যৌথ পরিচালনায় গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।


পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, ১৫ বছরের পতিত ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোঁয়া এখনো দেশকে অনিরাপদ করে রেখেছে। পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেয়াওর পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে একই সাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনায়, বক্তব্যে ও মন্তব্যে শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। কারণ কোন অবস্থাতেই পতিত ফ্যাসিবাদকে কোনো সুযোগ করে দেওয়া যাবে না।


পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ৫ আগস্টের পরে দেশ গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন বলে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সেই সংস্কার হতে হবে রাষ্ট্রের কাঠামোতে, আইনে এবং রাজনৈতিক দলের চরিত্র ও সংস্কৃতিতে। রাষ্ট্রের কাঠামো ও আইনি সংস্কারের কাজ কিছুটা অগ্রগতি হলেও রাজনৈতিক চরিত্র ও সংস্কৃতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে নাই। ৫ আগস্টের পরে রাজনৈতিক হানাহানিতে নিহত-আহত মানুষের সংখ্যা শুনে আঁতকে উঠতে হয়। চাঁদাবাজি কোনো অর্থেই কমে নাই। সন্ত্রাসও কমে নাই। বরং রাজনৈতিক পরিচয়ে ধর্ষণের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিডফোর্ট হাসপাতালের সামনে যে বর্বরতায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রতিবাদে জনতা ফুঁসে উঠেছে স্বাভাবিক কারণেই।


জনতার সেই প্রতিবাদকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বর্বর সেই হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করে ফেলা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে মানুষ এই ধরনের রাজনীতি দেখতে চায় না। এই ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের একটা বড় অংশ বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিএনপি কর্তৃক তাদের বহিষ্কারের মাধ্যমে এটা প্রমাণিতও বটে। তাই বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলব, কর্মীদের অপরাধের দায়ভার দল হিসেবে আপনাদের বহন করতেই হবে। চাঁদাবাজরা বিএনপির সাথে সম্পৃক্ততা দেখিয়েই জনতার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। তাই জনতার ক্ষোভ বিএনপির প্রতি হবে এটা স্বাভাবিক। জনতার এই প্রতিবাদকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে দলের ভেতরে থাকা অপরাধীদের চিহ্নিত করুন। অপরাধ ঘটার আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।


সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন— ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল, মহাসচিব ও খুলনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম এর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) মুফতী মোস্তফা কামাল, কেন্দ্রীয় শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শুয়াইব হোসেন, খুলনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইমরান।


সমাবেশে অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল বলেন, মাইলস্টোন স্কুলে যা ঘটেছে তা গোটা জাতীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শোক প্রকাশ করার ভাষাও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কষ্ঠ, বেদনা আর আক্ষেপে হৃদয় হাহাকার করছে। আহতরা দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠুক, নিহতরা শাহাদাতের মর্যাদায় সম্মানিত হোক।


তিনি বলেন, দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় আমরা হতবিহব্বল। তারপরেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস এবং আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা করেছে তা সাধুবাদ যোগ্য।


অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমদ বলেন, চাঁদাবাজী ও রাজনৈতিক দস্যুতা জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমাদের সন্তানরা বিপ্লব করেছিল। সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতির আমূল সংস্কার হবে। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। প্রতিহিংসা দূর হবে এমন প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু ক্ষমতা লোভী কিছু মানুষ ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করায় সুস্থ রাজনীতির প্রত্যাশা আজ ফিকে হয়ে গেছে। সোহাগ হত্যা তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক ইস্যুতে আমরা কোনভাবেই ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছি না। 


তিনি বলেন, জুলাই’২৪ এর বিপ্লব ছিল নতুন বাংলাদেশ আবিষ্কার। বিপ্লবীদের শ্লোগান ছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিজ। ইমাম-খতীবদের জুমার খুতবা ছিল ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। আমরা আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক বাক্সে ভোটের মাধ্যমে সেই কাঙ্খিত ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ।


পীর সাহেব চরমোনাই সমাবেশে খুলনার-৬ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কর্তৃক মনোনীত হাত পাখার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।


তালিকা—

খুলনা-১

(দাকোপ- বটিয়াঘাটা)

আলহাজ্ব মাওলানা আবু সাঈদ, সহ-সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলা শাখা

খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা)

আলহাজ্ব মুফতি আমানুল্লাহ 

সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর 

খুলনা-৩

( খালিশপুর - দৌলতপুর - খানজাহান আলী-আড়ংঘাটা)

আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল 

নায়েবে আমির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ 

খুলনা-৪

( রূপসা- দিঘলিয়া - তেরখাদা)

 হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ 

মহাসচিব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ 

খুলনা-৫

(ফুলতলা - ডুমুরিয়া )

 আলহাজ্ব মুফতি আব্দুস সালাম 

সহ-সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ডুমুরিয়া উপজেলা।

খুলনা-৬

(পাইকগাছা - কয়রা)

আলহাজ্ব হাফেজ আসাদুল্লাহ গালিব 

সেক্রেটারি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলা।


thebgbd.com/NIT