ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বেইজিংয়ে বৃষ্টি ও বন্যায় নিহত ৩০

ভারী বৃষ্টিপাতের কবলে পড়া নয়টি অঞ্চলে দুর্যোগ ত্রাণের জন্য চীন সরকার ৩৫০ মিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করেছে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৯ জুলাই, ২০২৫
বেইজিংয়ে বৃষ্টি ও বন্যায় নিহত ৩০ ভারি বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত চীনের বেইজিং।

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ৮০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার বেইজিং থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।


চলতি সপ্তাহে উত্তর চীনে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানী বেইজিং এবং হেবেই, জিলিন ও শানডং প্রদেশসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া শহরের পৌর বন্যা নিয়ন্ত্রণ সদর দপ্তরের বরাত দিয়ে জানায়, সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত বেইজিংয়ে সর্বশেষ ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছে।


স্থানীয় রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বেইজিং ডেইলি সোশ্যাল মিডিয়া জানিয়েছে, শুধুমাত্র চীনের রাজধানীতেই ৮০ হাজারের বেশি লোককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ‘ক্রমাগত অতি ভারী বৃষ্টিপাত বড় ধরনের দুর্যোগ সৃষ্টি করেছে।’ এই অতিবৃষ্টির কারণে শহরের কেন্দ্রস্থলের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি শহরতলির জেলা মিয়ুনে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে।


রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে শহরের উত্তরে হুয়াইরো জেলা ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ফাংশানও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেইজিং ডেইলি জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বেশ কয়েকটি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে এবং ১৩০টিরও বেশি গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।


সংবাদমাধ্যমটি ‘দয়া করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং সতর্কতার প্রতি মনোযোগ দিন এবং প্রয়োজন ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যাবেন না’ বলে জনসাধারণকে সতর্ক করেছে। মিয়ুনে লিউ নামের এক বাসিন্দা বলেন, তিনি সোমবার ভোরে তার অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের বাইরে বন্যার পানির তোড়ে যানবাহন ভেসে যেতে দেখেছেন।


এএফপি সাংবাদিকরা সেখানে একটি ক্রলার লিফট  মানুষ ও একটি কুকুরকে নিরাপদ স্থানে তুলে নিতে দেখেছেন। এ সময় উদ্ধারকারীরা হাঁটু পর্যন্ত পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মুজিয়াউ শহরের একটি জলাধার থেকে পানির তীব্র স্রোতের তোড় দেখেছেন। সামরিক যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স বন্যা প্লাবিত কর্দমাক্ত রাস্তাগুলো দিয়ে যাওয়ার সময় বিদ্যুতের তারগুলো ভেসে যেতে দেখা গেছে। সিসিটিভি জানিয়েছে, অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা একটি বয়স্ক পরিচর্যা কেন্দ্রে আটকা পড়া ৪৮ জনকে উদ্ধার করেছেন।


সোমবার গভীর রাতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলার পরিকল্পনা করার এবং বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বেইজিং ডেইলি জানিয়েছে, স্থানীয় কর্মকর্তারা ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনুসন্ধান ও উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং হতাহতের সংখ্যা কমাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’


রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক সিসিটিভি মঙ্গলবার জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কবলে পড়া নয়টি অঞ্চলে দুর্যোগ ত্রাণের জন্য সরকার ৩৫০ মিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর বেইজিং, তিয়ানজিন, হেবেই, শানসি, শানসি, অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া, উত্তর-পূর্ব জিলিন, পূর্ব শানডং এবং দক্ষিণ গুয়াংডং। রাজধানীর জন্য পৃথক ২শ’ মিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করা হয়েছে।


সিসিটিভি সোমবার জানিয়েছে, রাজধানীকে ঘিরে থাকা হেবেই প্রদেশে, চেংদে শহরের কাছে একটি গ্রামে ভূমিধসে চারজন নিহত হয়েছেন এবং আটজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করেছে। 


হেবেইয়ের রেডিও এবং টেলিভিশন স্টেশন জানিয়েছে, চেংদে ও আশপাশের এলাকাগুলোকে সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২০২৩ সালে, উত্তর ও উত্তর-পূর্ব চীন জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ৮০ জনেরও বেশি লোক মারা যায়, যার মধ্যে হেবেইতে কমপক্ষে ২৯ জন, যেখানে তীব্র বন্যায় ঘরবাড়ি এবং ফসলের ক্ষেত ধ্বংস হয়ে যায়।


সূত্র: এএফপি


এসজেড