যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যৌথভাবে একটি শক্তিশালী নতুন রাডার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এটি পৃথিবীর ভূমি ও বরফ-পৃষ্ঠের সূক্ষ্ম পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারবে এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় পূর্বাভাসে সহায়তা করবে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, নিসার (নাসা-ইসরো সিনথ্যাটিক অ্যাপারচার রাডার) নামের এই ট্রাক আকৃতির মহাকাশযানটি ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে ইসরোর জিওসিংক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল রকেটে চড়ে মহাকাশে পাড়ি জমায়।
নাসার আর্থ সায়েন্স বিভাগের পরিচালক ক্যারেন সেন্ট জার্মেইন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের গ্রহের পৃষ্ঠে প্রতিনিয়ত অর্থবহ পরিবর্তন ঘটে। কিছু পরিবর্তন ধীরে ঘটে, কিছু হঠাৎ করে ঘটে। কিছু পরিবর্তন বড়, কিছু আবার সূক্ষ্ম। ভূ-পৃষ্ঠের উল্লম্ব গতিবিধির এক সেন্টিমিটার (০.৪ ইঞ্চি) মতো ছোট পরিবর্তন শনাক্ত করতে সক্ষম নিসার। এটি ভূমিকম্প, ভূমিধস, আগ্নেয়গিরি থেকে শুরু করে বাঁধ ও সেতুর মতো পুরোনো অবকাঠামো পর্যন্ত প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করবে।
সেন্ট জার্মেইন বলেন, গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকাসহ আমরা ভূমির সঙ্কোচন ও স্ফীত হওয়া, চলাচল, বিকৃতি এবং গ্লেশিয়ার ও বরফ গলার চিত্র দেখতে পারব। আমরা বনভূমির আগুনও দেখতে পারব। ১২ মিটার চওড়া একটি ডিশ নিয়ে মহাকাশে যাওয়া নিসার পৃথিবী থেকে ৪৬৪ মাইল উচ্চতা থেকে প্রতি ১২ দিনে একবার পৃথিবীর প্রায় সব ভূমি ও বরফাঞ্চলের চিত্র ধারণ করবে।
কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানোর সময় স্যাটেলাইটটি ক্রমাগত মাইক্রোওয়েভ সঙ্কেত পাঠাবে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত সঙ্কেত গ্রহণ করবে। স্যাটেলাইটটি চলমান থাকায় প্রতিফলিত সঙ্কেত পরিবর্তিত হবে। তবে কম্পিউটার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলোকে উচ্চ-রেজুলেশনের বিস্তারিত চিত্রে রূপান্তর করা হবে।
সামান্য রেজুলেশনের এমন ফলাফল পেতে সাধারণ রাডারের জন্য ১২ মাইল চওড়া একটি বিশাল ডিশ প্রয়োজন হতো, যা বাস্তবে অসম্ভব। নিসার দুটি রাডার ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করবে- এল-ব্যান্ড এবং এস-ব্যান্ড। এল-ব্যান্ড উঁচু গাছপালা, যেমন গাছ শনাক্তে কার্যকর, আর এস-ব্যান্ড ঝোপ-ঝাড় ও ছোট গাছপালা নির্ণয়ে বেশি নির্ভুল।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি ও ভারতের ইসরো যৌথভাবে এই প্রকল্পে কাজ করেছে। উভয় পক্ষ পৃথকভাবে স্যাটেলাইটটির বিভিন্ন অংশ তৈরি করে এবং পরে ভারতের বেঙ্গালুরুতে ইসরোর স্যাটেলাইট ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড টেস্টিং এস্টাবলিশমেন্ট-এ একত্র করে ও পরীক্ষা চালায়। এই প্রকল্পে নাসার খরচ প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার, আর ইসরোর খরচ হয়েছে প্রায় ৯ কোটি ডলার।
সূত্র: এএফপি
এসজেড