আসন্ন ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আনতে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে সরকার। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এসব ট্রেনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অংশগ্রহণকারীরা মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরের মধ্যে রাজধানীতে পৌঁছাবেন। অনুষ্ঠান শেষে একই ট্রেনে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরত পাঠানো হবে।
এই বিশেষ ট্রেন ব্যবস্থাপনার জন্য মোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ট্রেন ভাড়ার এই ব্যয় বহন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (৩ আগস্ট) ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়, যেখানে এই ট্রেন চাহিদার কথা জানানো হয়। পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানালে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আটটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আগামী মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করা হবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস—এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর তাদের চিঠিতে কোন কোন জায়গায় ট্রেন দিতে হবে, কখন ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাতে হবে এবং কখন গন্তব্যে ফিরে যাবে তা উল্লেখ করেছে। সে অনুযায়ী সূচিপত্র তৈরি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। জুলাই অধিদপ্তর তাদের চিঠিতে বলেছে, ট্রেনগুলো দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। কর্মসূচি শেষে রাত ৮-৯টার মধ্যে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে ফিরতি যাত্রা শুরু করবে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ১৬টি কোচের সমন্বয়ে তৈরি করা একটি বিশেষ ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসবে।
এতে আসনসংখ্যা হবে ৮৯২টি। এর বাইরে দাঁড়িয়ে আরো অনেক মানুষ আসতে পারবে। এই ট্রেনটির জন্য রেল কর্তৃপক্ষ ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৭ লাখ টাকার কিছু বেশি। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে আরেকটি বিশেষ ট্রেন চলবে ৮টি কোচ নিয়ে। এতে যাত্রী আসন থাকবে ৭৩৬টি। এই ট্রেনটির জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৭২ হাজার টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা পথে ১০টি কোচ নিয়ে বিশেষ ট্রেনটি চলবে। এতে আসনসংখ্যা ৫১০টি। এই ট্রেনটির জন্য সাড়ে ৫৬ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। নরসিংদী থেকে ঢাকায় আসবে ১২ কোচের একটি ট্রেন। এটিতে আসনসংখ্যা ৬৫২টি। ভাড়া ধরা হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা। সিলেট থেকে ১১টি কোচ নিয়ে বিশেষ ট্রেন আসবে। এর কোচ সংখ্যা ১১টি এবং ট্রেনটিতে ৫৪৮টি আসন থাকবে। এই ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
রাজশাহী থেকে ঢাকার পথে ট্রেন আসবে ৭টি কোচ নিয়ে। এতে আসন থাকবে ৫৪৮টি। এই ট্রেনটির জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ১৪টি কোচ নিয়ে একটি বিশেষ ট্রেন আসবে রংপুর থেকে। এতে যাত্রী আসন থাকবে ৬৩৮টি। এই ট্রেনটির জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা। ফরিদপুরের ভাঙা থেকে ৭টি কোচ নিয়ে একটি ট্রেন আসবে। এতে আসনসংখ্যা হবে ৬৭৬টি। এই ট্রেনের ভাড়া প্রায় ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশেষ ট্রেনগুলো পরিচালনার জন্য তারা একটি সূচি তৈরি করেছে। এর মধ্যে রংপুর থেকে আসা ট্রেনটি যাত্রা শুরু করবে কর্মসূচির আগের দিন, ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায়। এর বাইরে দূরের গন্তব্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী থেকে ৫ আগস্ট ভোরে ট্রেনগুলো ছেড়ে আসবে। ঢাকার আশপাশের জেলা গাজীপুর, নরসিংদী ও ফরিদপুর থেকে ট্রেনগুলো ছাড়বে দুপুরের আগে আগে। অনুষ্ঠান শেষে দূরের গন্তব্যের ট্রেনগুলো আগে ফিরতি যাত্রা শুরু করে। পর্যায়ক্রমে কাছের গন্তব্যের ট্রেনগুলো ছাড়বে।
এর আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলটি ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তাদের সমাবেশগুলোতে মানুষ আনতে ট্রেন ভাড়া করত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল তাদের কর্মসূচিতে লোক আনতে নির্ধারিত টাকা দিয়ে ট্রেন ভাড়া করে।
thebgbd.com/NA