বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলে ৬০১ নং রুমে ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় চেয়ার, খাটের মশারীর রড দিয়ে চারজনকে মারধর করা হয়। পরে আহত শিক্ষার্থীদেরকে তেজগাঁওয়ের শমরিতা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা যায়, সিনিয়র-জুনিয়রদের পূর্বের কোন্দলের জেরে গত বৃহস্পতিবার (২৪ মে) মধ্যরাতে হলের ৬০১ নং রুমে মারামারির ঘটনা ঘটে। রুমটিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের পাঁচজন শিক্ষার্থী থাকতো। তারা হলেন ৪৭তম ব্যাচের জনি, সাকিব, শাফি, মাহি, শাহেদ।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল ও জিএমএজি ওসমানী হলের ৪৬তম ব্যাচের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী তাদেরকে 'গেস্টরুমে' নেয়ার জন্য আসেন। তবে রুমের শিক্ষার্থীরা গেস্টরুমে যেতে অস্বীকৃতি জানালে ৭/৮ জন রুমের ভেতর এসে তাদেরকে জোরপূর্বক গেস্টরুমে নিতে চাইলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে ৪৬তম ব্যাচের রেদোয়ান, শাকিল, নিয়াজ, ইমন, রাইসুল, ইমরান, আদনান, প্রাণ মারামারি শুরু করে।
ওই রুমের আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, চলমান সেমিস্টার ফাইনালের প্রস্তুতির জন্য আমরা পড়ালেখা করছিলাম। রাত একটার দিকে ৪৬তম ব্যাচের রেদয়ানুল হকসহ অনেকজন সিনিয়র রুমের দরজায় এসে ধাক্কা দেয়। তারা আমাদের গেস্টরুমের জন্য তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হতে বলে। হলে গেস্টরুম জাতীয় যেকোনো ধরনের র্যাগিং কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় আমরা সেখানে যেতে অস্বীকৃতি জানাই ৷
এতে সিনিয়ররা আমাদের রুমের ভেতরে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা আমাদের কাপড় ধরে টেনে রুম থেকে বের করার চেষ্টা করে। আমরা বাধা দিলে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়, রুমে থাকা বেডের লোহার স্ট্যান্ড খুলে রুমমেট মাহির পায়ে আঘাত করে।
ফলে তার একটি পা কেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অন্য একজন রুমমেট জনির বুকে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করায় সেখানে কেটে যায়। রুমে অবস্থানকারী বাকী দুজন সাকিব ও শাফীকে চেয়ার দিয়ে আঘাত করা হয়। অমানবিক নির্যাতনের পর সিনিয়ররা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে রেদোয়ানুল হক বলেন, আগের দিন জুনিয়র আমার গায়ে হাত তুলে। এতে অলমোস্ট হলের যারা জুনিয়র আছে তারা আমার সাথে মজা নেয় যে, আমি জুনিয়রের হাতে মার খেয়েছি। আমরা রুমে গেছিলাম তাদের সঙ্গে কথা বলতে। ৪৬তম ব্যাচের সবাই আসছিলো।
রুমে যারা ছিল তাদেরকে ডাকার পরে আসতেছিলো না। তখন রুমে থাকা শাহেদ ছুরি বের করে। জুনিয়রের হাতে ছুরি দেখে চিল্লাচিল্লি শুরু হয়। পরে আমরা রুমে ঢোকায় তারা ধাক্কাধাক্কি করে। এতে দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। তারাও আমাদেরকে খাটের লোহা দিয়ে মারার চেষ্টা করে। ইন্ডিভিজুয়াল কাউকে টার্গেট করে মারা হয় নাই।
তিনি আরও বলেন, ঘটনায় আমাকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। জুনিয়রের হাতে আমি মার খেয়েছি। মার খেয়ে চুপ থাকলে এমন কিছু আর হতো না। আর ঘটনায় শাহেদ যদি ছুরি বের না করতো এমন কিছুই হতো না। তবে ছুরি বের করা নিয়ে শাহেদ বলেন, ছুরি দেখানোর বিষয়টি মিথ্যা। আমি কাউকে ছুরি দেখাইনি।
তারা এই হামলার দায় এড়ানোর জন্য বা ঘটনাটি অন্যদিকে নেয়ার জন্য এমন অভিযোগ করছে। রুমে আমরা কেবল পাঁচজন ছিলাম অথচ তারা সংঘবদ্ধভাবে আমাদের জোরপূর্বক গেস্টরুমে নেয়ার চেষ্টা করে এবং আমরা যেতে মানা করায় আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং মারামারি শুরু করে।
পরে শুক্রবার (২৪ মে) সকালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলে হল প্রশাসন অভিযুক্ত ও আহত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে। হল প্রভোস্ট ড. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন হবে। আর কমিটির রিপোর্টের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।