ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পেটে গজ রেখে সেলাই, মারা গেলেন প্রসূতি

চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন নওগাঁর প্রসূতি সুমি খাতুন।
  • | ২৯ মে, ২০২৪
পেটে গজ রেখে সেলাই, মারা গেলেন প্রসূতি সংগৃহীত

চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন নওগাঁর প্রসূতি সুমি খাতুন। গত মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।


সুমির পরিবার ও ক্লিনিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মে সকালে প্রসব ব্যথা শুরু হলে শহরের হাসপাতাল রোড এলাকায় অবস্থিত একতা ক্লিনিকে নেয়া হয় ওই প্রসূতি নারীকে। সেখানে ওই দিনই সিজার করান প্রসূতি বিদ্যা ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি।


সিজারের জন্য জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করেন ডাক্তার তানিয়ার স্বামী নওগাঁ সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডাক্তার আদনান ফারুক।


সিজারের পরই ওই সুমি তার পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন এবং প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তার তানিয়া ক্লিনিকের মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রউফকে দিয়ে দ্রুত রোগীর পেটে সেলাই করিয়ে নেয়।


তারপর রাত ১০টার দিকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয় সুমিকে। হাসপাতালে নেয়ার পর রাতেই পরীক্ষা করে জানা যায় সুমির পেটে বাড়তি কিছু একটা জিনিস রয়েছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ আর সেটার জন্য তাকে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারের সম্মতিতে ফের অপারেশন করা হয়।


এর ১৩ দিন পর আজ সকালে মারা যায় সুমি। সুমির এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া এসেছে জেলার আত্রাই উপজেলার সন্নাসবাড়ী গ্রামে। সুমির এমন মৃত্যূ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না স্থানীয় প্রতিবেশীরারও।


সুমির খাতুনের মা রহিমা বেগম বেগম বলেন, অভিযুক্তরা তাদের লোকজনের মাধ্যমে টাকার অফার দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। আমরা তাতে রাজি হইনি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজন হাসপাতালের ডাক্তাররা যখন প্রথমে সুমিকে দেখেছিল তখনই বলেছিল এই রোগীর অবস্থা খুব খারাপ নওগাঁতে প্রোপারভাবে সিজারিয়ান করা হয়নি। 


তারপর যখন সেখানে অপারেশন করলো তখন ডাক্তাররা জানাই সুমির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও পেটে সামান্য গজ ছিল। যার কারণে শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। দুই বার আইসিইউতে নেয়ার পরও আমার মেয়েটাকে বাঁচানো গেল না। আমার মেয়েটাকে নওগাঁর একতা ক্লিনিকে গরুকে সেলাই করার মত পায়ের হাঁটুর ওপর উঠে সেলাই করেছিল।


সব কিছুই তাদের ভুল চিকিৎসা ছিল। ওই ডাক্তার তানিয়াকে কাছে পেলে তার হাঁটুর ওপর উঠে ওভাবেই সেলাই করে দিতাম। অভিযুক্ত ডাক্তার, ক্লিনিক মালিক ও এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছি। আর যেন আমার সুমির মত কারো ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু না হয়।


অভিযুক্ত ডাক্তার তানিয়া রহমান তনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চাই না। প্রয়োজনে ডাক্তারদের সংগঠন বা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আমার যা বলার আমি কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছি। আর রাজশাহীতে সুমিকে নিয়ে যাওয়ার পর কি হয়েছে সে বিষয়ে আমি অবগত নয়।


এ বিষয়ে সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজন হাসপাতালের পরিচালক স্যারকে বিষয়টি নিয়ে চিঠিও দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।