নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটেছে। এরপরও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদী থেকে চলছে বালু ও মাটি কাটার মহোৎসব। নদীরক্ষা বাঁধের গা ঘেঁষে তোলা হচ্ছে মাটি। এমনকি বসতবাড়ির নিচ থেকে অবাধে প্রকাশ্যে বালু তুলছে প্রভাবশালী মহল। এতে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদীরক্ষা বাঁধ ছাড়াও মানুষের বসতবাড়িও কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই ভয়াবহ রূপ নেয় পদ্মা নদী। সর্বনাশা এ নদীতে বিলীন হয় মানুষের ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। নদীতে পানি বাড়লেই আতঙ্কে দিন কাটে পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনকবলিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাডাঙ্গা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর আলিমনগর ঘাটে ট্রলার থেকে বালু তুলে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে নদীপাড়ে। অবৈধ এ কর্মযজ্ঞ চলছে প্রকাশ্যে। বালু উত্তোলনের কারণে ভেঙে যাচ্ছে নদীর পাড়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বাংলা সনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের শুধু রানীনগর বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ ইজারা নিয়ে পুরো নদী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালুখেকোরা।
অবৈধভাবে নারায়ণপুর চরের একাধিক স্থান থেকে বালু তুলছে তারা। এতে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ঝুঁকিতে রয়েছে পদ্মা নদীর তীররক্ষা বাঁধ। এমনকি একই এলাকায় অবৈধভাবে বালু ও মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে হত্যা ও ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে। এরপরও বন্ধ হচ্ছে না বালু ও মাটি কাটা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘গত সাত বছরে মোট ১১ বার বাড়ি সরিয়েছি পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে। এখন আলীমনগর ঘাটে বসবাস শুরু করেছি। এরপরেও শান্তি নেই। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাঁধ নির্মাণ করেছে। অথচ বালুখেকোরা বাঁধের নিচ থেকেই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বাঁধসহ নদীর পাড়ে থাকা হাজার হাজার বাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
কৃষক মো. আবু হানিফ বলেন, ‘নিজের জমিতে চাষাবাদ করতে গিয়েও বাধার সম্মুখীন হয়েছি। আমার নিজের জমি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে অবৈধ বালু-মাটি কাটা সিন্ডিকেট। বাধা দিতে গেলেই মামলা-হামলা করে তারা। স্থানীয়ভাবে এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদ রানা টিপু। তার লোকজন পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এসব বালু-মাটি কাটে।
জুবায়ের আহমেদ নামের এক যুবক বলেন, ‘গত বছরের ২৩ এপ্রিল সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের জনতার হাট এলাকায় অবৈধভাবে বালু-মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণে চন্দ্রনারয়ণপুর গ্রামের মো. কসিমুদ্দিনের ছেলে জিয়ারুল ইসলাম জিয়া নিহত হন। এ ঘটনার পরেও থেমে নেই অবৈধভাবে বালু-মাটি উত্তোলন। একই জায়গায় এখনও চলছে অবৈধভাবে বালু ও মাটি কাটা।
কৃষক মাসুদ রানা বলেন, ‘এখানে কোন বালুমহাল নেই। অথচ অবৈধভাবে প্রতিনিয়ত পাড় ঘেঁষে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। তাদেরকে এসব কাজে সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। তা না হলে কিভাবে দিনের বেলায় এভাবে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করতে পারে তারা।
তবে পদ্মা নদীতে ইজারার বাইরে বালু ও মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়সারা আশ্বাস স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ও ।
পাউবো চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। অবৈধভাবে কেউ তা করলেই প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক এ কে এ গালিভ খাঁন বলেন, ‘পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বালু ও মাটি উত্তোলন রোধ করা হবে।