পিকে হালদারের মা লীলাবতী হালদার কলকাতায় মারা গেছেন। গত ২৮ মে তিনি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তবে মৃত্যুর ৬ দিন পার হলেও ২ ছেলে জেলে থাকায় এখনো তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়নি।
বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে গত ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট থেকে কলকাতার বাইপাসের পাশে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন লীলাবতী হালদার। মাল্টিঅর্গ্যান ফেলিওরের কারণে গত ২৮ তারিখ মারা যান তিনি। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকায় মানবিক দৃষ্টিতেও হালদার ভাইদের মায়ের অন্তোষ্টি কার্যের জন্য প্যারোল মঞ্জুর করেনি জেল কর্তৃপক্ষ। সেদিন থেকেই লীলাবতীর দেহ সংরক্ষিত রয়েছে কলকাতার পিস ওয়ার্ল্ডে।
এদিকে গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে আদালত বন্ধ ছিল। আজ সোমবার ৩ জুন আদালত খুলতেই ব্যাংকশাল আদালতের স্পেশাল ইডি কোর্টে জামিনের আবেদন করেন প্রশান্ত এবং প্রাণেশ। মানবিক দৃষ্টিতে সোমবার মায়ের অন্তোষ্টির জন্য পিকে হালদার ও প্রাণেশ হালদারের হয়ে ১৫ দিনের অন্তর্বর্তী জামিন আবেদন করেন আইনজীবী বিশ্বজিৎ মান্না। পাল্টা জামিনের বিরোধিতা করে মাত্র চারদিনের প্যারোলের দাবি জানান ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী।
একই রকম আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত "কলকাতা টিভির" মালিক কৌস্তভ রায়ের মামলার রেফারেন্স টেনে অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেন খুব বেশি হলে চারদিনের প্যারোল দেয়া যেতে পারে। দুপক্ষের টানাপোড়েনে অবশ্য সোমবার বিচারক প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। আগামীকাল মঙ্গলবার ফের এই মামলার শুনানি।
লীলাবতী হালদারের আরেক ছেলে পৃথ্বীশ হালদার বর্তমানে বাংলাদশ ও ভারত থেকে পালিয়ে কানাডায় অবস্থায় অবস্থান নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ অক্টোবর দুর্নীতির মামলায় গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া মামলার ১৩ আসামির প্রত্যেককে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দণ্ডিত করেন ঢাকার দশম বিশেষ জজ আদালত। দেশে পিকে হালদারের দুর্নীতির কোনো মামলায় এটিই ছিল প্রথম রায়।
রায়ে পিকে হালদার ছাড়া অন্য ১৩ আসামিকে ২ মামলায় ৩ ও ৪ বছর করে মোট সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে চারজন কারাগারে আছেন। তারা হলেন- অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা।
এ ছাড়া পিকে হালদারসহ অন্য ১০ আসামি পলাতক। এদের মধ্যে পিকে হালদারের মা লিলাবতী হালদারও ছিলেন। বাকিরা হলেন- তার ভাই প্রিতিশ কুমার হালদার, সহযোগী অমিতাভ অধিকারী, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।
তবে বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০২২ সালের ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাট থেকে পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আরও বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে তার আরও ৫ সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই বছরের ২১ মে অর্থপাচার সংক্রান্ত আইন, ২০০২-এ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই আদালতের তরফ থেকে পিকে হালদারকে দুই দফায় মোট ১৩ দিন পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেয়া হয়। আর এরপর থেকে কয়েক দফায় বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন অভিযুক্তরা। এরমধ্যে পিকে হালদারসহ ৫ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে। অন্যদিকে, একমাত্র নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।