ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ‘এনডিএ’ একটানা তৃতীয়বার দেশটির ক্ষমতায় আসার জন্য লড়ছে।
সপ্তম দফা ভোটগ্রহণের পরই এক্সিট পোলসহ বিভিন্ন জরিপ ও সমীক্ষায় মোদির বিজেপি তথা এনডিএ’র জয়জয়কারের কথা বলা হয়। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অন্তত ভোট গণনা শুরু হওয়ার ঘণ্টা তিনেক পরের চিত্র এমনই।
ভারতের স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১২টায় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির লাইভ আপডেট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এগিয়ে রয়েছে ২৯০টি আসনে। আর বিরোধী ‘ইনডিয়া’ জোট এগিয়ে ২২৮টি আসনে।
অন্যদিকে ইন্ডিয়া টুডের প্রকাশিত সর্বশেষ গণনার ফল বলছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯৬ আসনে এগিয়ে আছে। আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইনডিয়া’ জোট এগিয়ে ২২৮ আসনে। বাকি ১৯ আসনে এগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্যরা।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো দল বা জোট যদি সরকার গঠন করতে চায় তাহলে তাদের লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে ২৭২টিতে জয় পেতে হবে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে দুটি বড় জোটের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা গেছে। এর একটি দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) এবং অন্যটি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন আইএনডিআইএ জোট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এনডিএ জোট টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইনডিয়া’ জোটও নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের ব্যাপারে আশাপ্রকাশ করেছে।
শনিবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বরাবরের মতো দেশটির সংবাদমাধ্যমে বুথ ফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হতে শুরু করে। যদিও এসব জরিপের ফলাফল অনেক সময় উল্টে যেতে দেখা যায়। এর আগে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩৫৩ আসনে জয় পায় এনডিএ জোট।
দেশটির অন্তত চারটি গণমাধ্যমের বুথ ফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট লোকসভার ৩৫০টিরও বেশি আসনে জয় পেতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন নরেন্দ্র মোদি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি প্রথম বুথ ফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করে বলে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবারের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির চারটি সংবাদমাধ্যম ও সংস্থার বুথ ফেরত জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট ৫৪৩ আসনের লোকসভার ৩৫০টিরও বেশি আসনে জয় পেতে পারে। যেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ২৭২টি আসন প্রয়োজন।
ইন্ডিয়া নিউজ ও ডি-ডায়নামিকসের বুথ ফেরত জরিপে বলা হয়, লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট ৩৭১ ও ‘ইনডিয়া’ জোট ১২৫ আসনে জয় পেতে পারে। এছাড়া কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইনডিয়া’ জোট ১২৫ আসনে জয়ী হতে পারে।
দেশটির অপর সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক ভারত ও ম্যাট্রিজের বুথ ফেরত জরিপের ফলাফলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৫৩ থেকে ৩৬৮ আসনে জয় পেতে পারে বলে জানানো হয়। এছাড়া দেশটির বিরোধী দলগুলোর জোট ‘ইনডিয়া’ ১১৮ থেকে ১৩৩ আসনে জয়ী হতে পারে বলে দাবি করা হয়।
ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক টিভি ও পিএমএআরকিউয়ের বুথ ফেরত জরিপে দাবি করা হয়, এনডিএ জোট ৩৫৯ আসনে এবং বিরোধী জোট ১৫৪ আসনে জয় পেতে পারে। অন্যান্য দলগুলোর দখলে যেতে পারে ৩০ আসন।
তবে চূড়ান্ত ভোট গণনা বা ফলাফলের আগে বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে দেশটিতে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। মূলস্রোতের অধিকাংশ সংবাদমাধ্য়মে যে বুথ ফেরত সমীক্ষা দেখানো হয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে বিপুল সংখ্য়াগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে মোদি সরকার।
এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য়েও বিজেপি বেশি আসন পাবে বলে দাবি করা হয়। বিজেপি বুথ ফেরত এসব সমীক্ষাকে স্বাগত জানালেও কংগ্রেস তাৎক্ষণিকভাবে এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বাস্তব চিত্রও মিলল এমনটিই।
ভারতের অধিকাংশ সংবাদমাধ্য়মের সমীক্ষা বলছে, বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ ৩৫০টিরও বেশি আসন পেতে চলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রাথমিক ফলাফলে তেমনটি হয়নি। আবার সমীক্ষায় কংগ্রেস ও তাদের নেতৃত্বাধীন ‘ইনডিয়া’ জোট যতটা খারাপ ফল করবে বলে দাবি করা হয়, প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে বিরোধী এই জোটের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে।
কংগ্রেস ও তাদের নেতৃত্বাধীন ‘ইনডিয়া’ জোট এমন অনেক আসনে এগিয়ে রয়েছে, যেগুলোতে ২০১৯ সালের নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা পরাজিত হয়।
এছাড়া কংগ্রেস তার দলীয় কর্মীদের আগেই জানায়, ভোট গণনার আগে বিরোধী শক্তিকে মানসিক চাপে ফেলতেই গণমাধ্য়মকে ব্য়বহার করেছে বিজেপি। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আর তাই গণনার দিন কর্মীদের শেষ পর্যন্ত গণনাকেন্দ্রে থাকার আদেশ জারি করেছে কংগ্রেস। তৃণমূল-সহ ‘ইনডিয়া’ জোটের একাধিক দল একই কথা বলেছে। তাদের বক্তব্য়, বুথ ফেরত সমীক্ষার ক্ষেত্রেও বিজেপি মিডিয়াকে ব্য়বহার করেছে। যে ফলাফল দেখানো হয়েছে, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।