ঢাকা | বঙ্গাব্দ

গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে বুথফেরত জরিপ!

  • | ০৪ জুন, ২০২৪
গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে বুথফেরত জরিপ! এবারের বুথফেরত জরিপ একেবারেই ভুল প্রমাণিত

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ দফার ভোটগ্রহণ শেষে বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি সংস্থা। প্রকাশিত সেই জরিপে বেশিরভাগ সংস্থাই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে বিপুলভাবে এগিয়ে রাখা হয়। মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ৮টা থেকে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর এই আভাসের ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ফলে বুথফেরত গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

অবশ্য ইতোপূর্বে ভারতে বুথফেরত জরিপের পূর্বাভাস সম্পূর্ণ ভুল হওয়ার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। সবশেষ বড় ঘটনাটি ঘটে ছয় মাস আগেই। ছত্তিশগড়, রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রকৃত ফলাফল কোনো বুথফেরত জরিপই অনুমান করতে পারেনি। এবারও বুথফেরত জরিপ ‘ভুল’ প্রমাণিত হতে যাচ্ছে! জরিপে এনডিএর নিরঙ্কুশ জয়ের সম্ভাবনা দেখা গেলেও বাস্তব চিত্র এখন পুরোপুরি ভিন্ন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

এদিকে এসব জরিপকে গুরুত্ব দেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি জানান, এর কোনো গুরুত্ব নেই।

২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বুথফেরত জরিপ আর ভোটের প্রকৃত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই।

২০১৪ সালের বেশিরভাগ বুথফেরত জরিপের পূর্বাভাস বলা হয়, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ক্ষমতায় আসছে। কিন্তু এনডিএ যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে, সেই ধারনা দিতে পারেনি পূর্বাভাসগুলো।

ওই বছর ইন্ডিয়া টুডে-সিসেরোর জরিপে পূর্বাভাস দেওয়া হয়, এনডিএ জোট ২৭২ আসন পেতে যাচ্ছে। এছাড়া নিউজ টোয়েন্টিফোর-চাণক্য ৩৪০ আসন, সিএনএন-আইবিএন-সিএসডিএস ২৮০, টাইমস নাউ-ওআরজি ২৪৯, এবিপি নিউজ-নিয়েলসেন ২৭৪, এনডিটিভি-হানসা রিসার্চ পূর্বাভাস দিয়েছিল এনডিএ ২৭৯ আসন পাবে।

প্রকৃতপক্ষে এনডিএ জোট ওই নির্বাচনে জিতে ৩৩৬ আসনে। এর মধ্যে ২৮২ আসন পায় বিজেপি।

২০১৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের বিপুলসংখ্যক আসন হারানোর পূর্বাভাসও দিতে পারেনি কোনো বুথফেরত জরিপ। সেই নির্বাচনে ইন্ডিয়া টুডে-সিসেরোর জরিপে পূর্বাভাস দেওয়া হয়, ইউপিএ জোট ১১৫ আসন পেতে যাচ্ছে। এছাড়া নিউজ টোয়েন্টিফোর-চাণক্য ১০১ আসন, সিএনএন-আইবিএন-সিএসডিএস ৯৭, টাইমস নাউ-ওআরজি ১৪৮, এবিপি নিউজ-নিয়েলসেন ৯৭, এনডিটিভি-হানসা রিসার্চ পূর্বাভাস দিয়েছিল, ১০৩ আসন ইউপিএ পেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ইউপিএ জোট ওই নির্বাচনে জিতেছিল মাত্র ৬০ আসনে, এর মধ্যে ৪৪টি আসন পায় কংগ্রেস।

২০১৯ সালের নির্বাচনেও বুথফেরত জরিপে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। সেইবার বুথফেরত জরিপের পূর্বাভাসই শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়।

সেই নির্বাচনে ইন্ডিয়া টুডে-এক্সিসের বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, এনডিএ জোট ৩৩৯ থেকে ৩৬৫টি আসনে জিততে যাচ্ছে। এছাড়া নিউজ টোয়েন্টিফোর-চাণক্য ৩৫০ আসন, নিউজ এইটিন-ইপসোস ৩৩৬, টাইমস নাউ-ভিএমআর ৩০৬, ইন্ডিয়া টিভি-সিএনএক্স ৩০০, সুদর্শন নিউজ ৩০৫ আসনে বিজেপির জয়ের পূর্বাভাস দেয়। শেষ পর্যন্ত এনডিএ জোট পায় ৩৫২ আসন। এর মধ্যে বিজেপি জিতে ৩০৩ আসনে।

নির্বাচনে বুথফেরত জরিপে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের আবারও পরাজয়ের পূর্বাভাস পাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত সেটিই হয়।

নির্বাচনের পর ইন্ডিয়া টুডে-এক্সিসের বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, ইউপিএ জোট ৭৭ থেকে ১০৮টি আসন পেতে পারে। এছাড়া নিউজ টোয়েন্টিফোর-চাণক্য ৯৫ আসনে, নিউজ এইটিন-ইপসোস ৮২, টাইমস নাউ ভিএমআর ১৩২, ইন্ডিয়া টিভি-সিএনএক্স ১২০, সুদর্শন নিউজ পূর্বাভাস দেয়, ইউপিএ ১২৪ আসন পাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত ইউপিএ জোট পায় ৯১ আসন, যার মধ্যে কংগ্রেস জিতে ৫২ আসনে।

বুথফেরত জরিপ কী?


বুথফেরত জরিপ একটি নির্বাচনী জরিপ। ভোট দেওয়ার পর কেন্দ্রের সামনেই ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে জরিপ চালানো হয়। এই জরিপের ফলাফল সাধারণত নির্বাচনের ফলাফলের একটি পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হয়। নির্বাচনের ফলের আভাস পেতে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতে নির্বাচন চলার সময়ে বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ নিষিদ্ধ। তবে পুরো ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পর ফলাফল প্রকাশ করা যায়। সেই হিসেবে শনিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে সংস্থাগুলো।