২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন তিনি। এ বাজেটে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
দাম বাড়ছে যেসব পণ্যের
সিগারেট: প্রতিবারের মতো এবারও প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য স্তর বাড়ানো হচ্ছে। ফলে সবধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে। বাজেটে তিন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৬৫.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এছাড়া বিড়ি পেপারের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে।
জর্দা: প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪৮ টাকা এবং একই পরিমাণ গুলের মূল্য ২৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে যারা পান-জর্দা খান, তাদের খরচ বাড়বে।
সিমকার্ড: মোবাইল অপারেটরদের সিমকার্ড বিক্রির ওপর ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা হতে পারে।
মোবাইলে কথা: বর্তমানে একজন ভোক্তা মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৭৩ টাকার কথা বলতে পারেন। বাকি ২৭ টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে কেটে নেয় মোবাইল অপারেটরগুলো। প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেবার ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তা হলে ৬৯.৩৫ টাকার কথা বলতে পারবেন।
আইসক্রিম: মিষ্টিজাত পণ্য আইসক্রিমে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শুল্ক ৫ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এর ফলে আইসক্রিমের দাম বাড়বে।
বৈদ্যুতিক মিটার: ইলেকট্রিক মিটারের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রি-পেইড কিলোওয়াট মিটার পার্টস ও অন্যান্য ইলেকট্রিক মিটারের পার্টসের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ ধার্য করার সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে বৈদ্যুতিক মিটারেএ দাম বাড়বে।
গাড়ি: বাতিল করা হয়েছে বর্তমানে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করার ব্যবস্থা। প্রস্তাবিত বাজেটে গাড়ি আমদানি করতে হলে সংসদ সদস্যদের ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপে প্রস্তাবনা আসতে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিলাসবহুল গাড়িতে শুল্ক ফাঁকি রোধে হাইব্রিড ও নন হাইব্রিড টাইপের গাড়ি ছাড় করতে কিছু সুনির্দিষ্ট শর্ত যোগ করা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে বিলাসবহুল গাড়ির দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
কোমল পানীয়: কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকসের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ন্যূনতম কর আরও ২ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। ফলে বেশি দামে কিনতে হবে এসব পণ্য। এছাড়া আমসত্ত্বের ওপরেও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।
কাজুবাদাম: দেশে কাজুবাদাম চাষকে সুরক্ষা দেওয়ার অংশ হিসেবে খোসা ছাড়ানো কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে কাজুবাদামের দাম বাড়তে পারে।
এসি: প্রস্তাবিত বাজেটে এসিকে বিলাসী পণ্য বিবেচনা করে দেশে এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও সব ধরনের উপকরণের ভ্যাট ৫ থেকে বৃদ্ধি করে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই এসির দাম বাড়তে পারে।
রেফ্রিজারেটর: কয়েক বছর ধরেই দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য খাতকে সরকার ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দিয়ে আসছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ফ্রিজ উৎপাদনে এই ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। যা আর বৃদ্ধি করা হবে না বলে জানা গেছে। ফলে নতুন অর্থবছরে ৫ শতাংশ ভ্যাটের হার বৃদ্ধি করে ৭ শতাংশ করা হতে পারে।
পানির ফিল্টার: বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। দেশে উৎপাদন হওয়ায় পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টারের দাম বাড়তে পারে।
এলইডি বাল্ব: ভবিষ্যতে এলইডি বাল্বের দাম বাড়তে পারে। কারণ এলইডি বাল্ব এবং এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে।
সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সন খরচ: সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনের ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে গাড়ি কনভার্সন খরচ বাড়তে পারে।
জেনারেটর: জেনারেটরের সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। তাই দেশের বাজারে জেনারেটরের দাম বাড়তে পারে।
ম্যাকরেল মাছ: বিদেশ থেকে আমদানি করা ম্যাকরেল মাছ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর যোগ করায় পণ্যটির মূল্য বাড়তে পারে।
বিল্ডিং নির্মাণ ব্যয়: প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পোনেন্টের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য ছিল, এটি আগামী বাজেটে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং তৈরির খরচ বাড়বে।
ইট: নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইটের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ ৫ থেকে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে বাড়বে ইটের দাম।
নিরাপত্তা সেবা: নিরাপত্তাসেবা ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বিদ্যমান। প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
হাটবাজারের ইজারা: কর ব্যতীত প্রাপ্তি (নন-ট্যাক্স রেভিনিউ) বাড়াতে বাজেটে জেলা, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের হাটবাজারের ইজারামূল্য কিছুটা বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে জমির নামজারির মাশুলও (ফি)।
হাসপাতালের আমদানি করা যন্ত্র: কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে রেফারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতাল শুল্কছাড় সুবিধায় ১ শতাংশ শুল্কে মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ রয়েছে। আগামী বাজেটে ২০০টিরও বেশি মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।