অঘটন! এই শব্দটাই বারবার সামনে এসে পড়ছে। তবে ঠিল অঘটন বলার উপায় নেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র সমানে সমান লড়বে সেটা ধরেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তিদের হারাবে, সেটা কল্পনায়ও ছিলো না। কল্পনাকেই বাস্তবে রূপ দিয়ে পাকিস্তানকে সুপার ওভারে ৫ রানে হারিয়ে আসরে টানা দ্বিতীয় জয় তুলো নিলো মোনাঙ্ক প্যাটেলের দল।
সুপার ওভারে আগে ব্যাটিং করে যুক্তরাষ্ট্র ১ উইকেটে ১৮ রান করে। পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালালেও ১৩ রানের বেশি করতে পারেনি। ৫ রানের জয়ে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো তারা আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলকে হারানোর স্বাদ পেল।
সুপার ওভারে বল হাতে আমির ছিলেন ভরসা। কিন্তু তালগোল তিনিই পাকান। ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হজম করেন। পরে অবশ্য দারুণভাবে ফিরে আসলেও তিন ওয়াইড ও চার বাই রান, সিঙ্গেল ও ডাবলসে ১৮ রান খরচ করেন। প্রথম বলে বাউন্ডারির পর বাকি পাঁচ বলে কোনো বাউন্ডারি আসেনি। তারপরও রান ১৮! মাত্র ১০ রান আসে ব্যাট থেকে। বাকিটা অতিরিক্ত।
১৯ রান তাড়ায় পাকিস্তানের শুরুটা হয়েছিল ডট দিয়ে। পরের বলে ইফতেখার বাউন্ডারি আদায় করে নেন। পরের বল ছিল ওয়াইড। বৈধ তৃতীয় বলে ইফতেখারকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান পেসার নেত্রাভালকার। জয়ের জন্য শেষ ৩ বলে দরকার ছিল ১৪ রান। পরের বল আবার ওয়াইড।
চতুর্থ বলে শাদাবের ব্যাটের নিচে দিয়ে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। পঞ্চম বলে ২ রান আসলে যুক্তরাষ্ট্রের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ শেষ বলে ছক্কা হলে আবার ম্যাচ টাই। কিন্তু নেত্রভালকারের ওয়াইয় ওয়ার্কার থেকে ১ রানের বেশি আদায় করতে পারেননি শাদাব। বল ফিল্ডারের হাতে যাওয়ার আগেই গ্যালারি ফেঁটে পড়ে। উল্লাসে মিলিয়ে যায় খেলোয়াড়রাও।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করে নেমে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রানের পুঁজি পায় পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে ওভারে উইকেট ও বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই ওপেনার মোনাঙ্ক ও টেলর। দুজন মিলে উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ৩৬ রান। ১৬ বলে ১২ রান করা টেলরকে বিদায় করে এই জুটি ভাঙেন নাসিম শাহ।
এরপর মোনাঙ্কের সঙ্গে জুটি বাঁধেন আন্দ্রেস গাউস। দুজন মিলে চার-ছক্কায় পাকিস্তানি বোলারদের দিশেহারা করে ফেলেন। এই জুটি ভাঙে দলীয় একশ রানের পর। গাউস ২৬ বলে ৩৫ রান করে বিদায় নিলে ভাঙে জুটি। ফিফটি তুলে খানিকবাদে বিদায় নেন মোনাঙ্কও (৫০)।
দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া যুক্তরাষ্ট্রকে পথ দেখান অ্যারন জোন্স ও নিতিশ কুমার। দুজন মিলে ম্যাচ নিজেদের দিকে টেনে নেন। শেষ ওভারে জিততে দরকার ছিলো ১৬। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ১৫ রান করায় ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে ছক্কায় রানের খাতা খোলা মোহাম্মদ রিজওয়ান ৮ বলে ৯ রান করেই বিদায় নেন। ৩ বলে ৩ রান করে তার পথেই হাঁটেন উসমান খান। রিজওয়ানের মতো ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করা ফখর জামান ৭ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফিরলে বিপদে পড়ে পাকিস্তান।
সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন বাবর আজম ও শাদাব খান। সমালোচনার গণ্ডিতে বন্দী শাদাব খান ২৫ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংসে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। শাদাব বিদায় নেওয়ার পর বাবরও ফেরেন ৪৪ রানে।
শেষদিকে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন শাহীন আফ্রিদি। তার ১৬ বলে ২৩ রানের ক্যামিওতে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান জড়ো করে পাকিস্তান।
যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে নসথুশ কেনজিগে তিনটি উইকেট শিকার করেন। মাত্র ১৮ রান খরচ করে দুটি উইকেট পান সৌরভ নেত্রভালকার।