২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভয়াবহ ভরাডুবির হয় কংগ্রেসের। সেবার মাত্র ৫২ আসনে জয় পায় দলটির প্রার্থীরা। এই ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে সভাপতির পদ থেকে সরেও দাঁড়ান রাহুল গান্ধী। কিন্তু সেই কংগ্রেস এবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জোট নিয়ে সরকার গঠন করতে না পারলেও, বিজেপিকে নাড়িয়েই দিয়েছে দলটি। যার কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে সেই রাহুলকেই!
জোটের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে এখন তাই বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে চান রাহুলকে। এমনকি সামনের নির্বাচনে যদি ইন্ডিয়া জোট জিতে যায়, তবে রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হতে রাজি থাকলে এ নিয়েও তাদের আপত্তি থাকবে না বলে জানা গেছে।
ভারতের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ফিকে হয়ে গেছে মোদি ম্যাজিক। বুথ ফেরত জরিপে বিজেপি ভূমিধস জয়ের আভাস পেলেও, বাস্তবতা উল্টো। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাই পায়নি বিজেপি। ফলে জোট নিয়ে সরকার গঠন করতে হচ্ছে বিজেপি। এনডিএ জোটের সরকার গঠন এবং টানা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ চূড়ান্ত হলেও, অস্বস্তি আছে সব মহলেই। কেননা যেকোনো সময়েই রাজনীতির মারপ্যাঁচে ভেঙে যেতে পারে সরকার। এর কৃতিত্বই দেওয়া হচ্ছে রাহুল গান্ধীকে।
‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ ও ‘ভারত জোড়ো নবযাত্রা’র মাধ্যমে কংগ্রেসের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চাঙা করেছেন এই রাহুল। এই দুই যাত্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার হাঁটেন তিনি, করেন বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সরাসরি গণমানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয় রাহুল গান্ধীর। এটাই তাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছিল। এছাড়া কংগ্রেস নিয়ে জনমনেও আশার সঞ্চার করেন তিনি। যার ফলাফল পাওয়া গেল ভোটের ফলে।
দলীয় সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে সম্প্রতি০ ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে বিরোধীদলের নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ঘরোয়া আলোচনায় দলের নেতারা অনেকে রাহুল গান্ধীকে বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।
এছাড়া বৈঠকের আগে উদ্ধব ঠাকুরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, আগামীবার ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করতে পারলে সেই সরকার ব্যবস্থায় রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হতে রাজি থাকলে এ নিয়ে তাদের আপত্তি থাকবে না।
দলীয় নেতারা বলেন, বিরোধীদলের প্রধানকে সিবিআই প্রধান, লোকপাল এবং মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার নিয়োগের বাছাই কমিটির বৈঠকে যেতে হয়। এসব জায়গায় প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও থাকেন। ফলে রাহুল গান্ধী বিরোধীদলের নেতা হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখোমুখি হয়ে নিজের মত বা আপত্তির বিষয়টি তুলে ধরতে পারবেন।
তবে একটি অংশ আবার বলছে, রাহুল গান্ধী সারাদিন সংসদে থাকার লোক নন। ফলে তার জন্য বিরোধীদলের প্রধানের ভূমিকা পালন করা কঠিন। তিনি সংসদে বসে থাকার বদলে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার বিষয়ে আগ্রহী। এবারের নির্বাচনে গতবারের চেয়ে ৪৭টি আসন বেশি পেয়েছে কংগ্রেস। তবে বেশকিছু জায়গায় সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট। ফলে মাঠে সংগঠন মজবুত করার কাজে নিয়োজিত হওয়া তার জন্য বেশি বাস্তবিক।
২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে লোকসভায় কোনো বিরোধীদলের নেতা ছিলেন না। ওই সময়ে কংগ্রেস বৃহত্তম বিরোধীদল হলেও বিরোধীদলনেতা হওয়ার মতো আসন পায়নি তারা। কেননা বিরোধীদলের নেতা হিসেবে পার্লামেন্টে জায়গা পেতে হলে লোকসভার মোট আসনের ১০ শতাংশ জিততে হবে। ফলে প্রথম মেয়াদে মল্লিকার্জুন এবং দ্বিতীয় মেয়াদে অধীর চৌধুরী বিরোধীদলনেতা ছিলেন।
এবারের নির্বাচনে অধীর হেরে গেছেন। কেবল তিনি নয়, মধ্যপ্রদেশে দিগ্বিজয় সিংহ, ছত্তিশগড়ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল, রাজস্থানের সি পি জোশি এবং হিমাচলে আনন্দ শর্মার মতো প্রবীণ নেতারাও হেরে গেছেন। ফলে রাহুল গান্ধী রাজি না হলে কংগ্রেসের জোট ইন্ডিয়ার নেতা কে হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।