ফের ইভিএম বাতিলের দাবি। তবে এবার দাবিটা এ দেশের কোনও নেতা তোলেননি। তুললেন খোদ সোশাল মিডিয়া জায়ান্ট এক্সের কর্ণধার এলন মাস্ক। মাস্কের সেই দাবিকে আবার সমর্থন করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সব মিলিয়ে দেশের লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের প্রায় দুসপ্তাহ পর নতুন করে চর্চায় ইভিএম।
আসলে সম্প্রতি পুয়ের্তো রিকোর নির্বাচনে ব্যাপক বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইভিএম হ্যাক, ভুয়ো ভোটারদের ভোটদানের বহু প্রমাণও নাকি জনসমক্ষে মিলেছে। সংবাদ সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সে দেশে ইভিএমের মাধ্যমে হওয়া ভোটে একশোর বেশি কারচুপি ধরা পড়েছে। পরে নাকি ব্যালটে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে সেই অনিয়ম সংশোধন করা হয়। আর এই ঘটনাটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক্সে পোস্ট করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র।
সেই প্রসঙ্গ তুলেই টেসলা কর্তা মাস্ক রোববার সকালে নিজের সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল এক্সে লিখলেন, “আমাদের দ্রুত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বাতিল করা উচিত। কারণ মানুষ বা এআইয়ের মাধ্যমে ইভিএম হ্যাক করার সম্ভাবনা থেকেই যায়। সেই সম্ভাবনা ক্ষুদ্র হলেও সেটার প্রভাব বিরাট।”
কেনেডির সেই পোস্ট শেয়ার করেই ওই মন্তব্য করেন মাস্ক। কিন্তু মাস্কের ইভিএম-বিরোধী পোস্টের বিরোধিতা করে পাল্টা টুইট করেন বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন ইলেকট্রনিক এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। তার বক্তব্য, মাস্ক সরলীকৃত ধারণার উপরে ভিত্তি করে বক্তব্য রেখেছেন। চন্দ্রশেখরের কথায়, “একটা সরলীকৃত ধারণা রয়েছে, কেউ সুরক্ষিত ডিজিটাল হার্ডঅয়্যার বানাতে পারবে না। ভুল। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য জায়গায় যে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রিত ভোটিং মেশিনে সাধারণ যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়, সেখানে মাস্কের ওই বক্তব্য প্রযোজ্য হতে পারে।” মাস্কের টুইটটি শেয়ার করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দাবি করেন, ব্লু টুথ, ইন্টারনেট, ওয়াইফাই কোনও কিছু দিয়েই ইভিএমকে হ্যাক করা যায় না। চন্দ্রশেখরের টুইটের নীচে মাস্কের মন্তব্য, “যে কোনও কিছুই হ্যাক করা যেতে পারে।”
বিশ্বের আরেক প্রান্তে বসে মাস্কের সেই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন এদেশের বিরোধী মুখ রাহুল গান্ধী। আসলে মাস্ক এদেশের নির্বাচনের প্রেক্ষিতে ইভিএম নিয়ে মন্তব্য না করলেও তার বক্তব্য এ দেশের নির্বাচনেও প্রাসঙ্গিক। ভারতের বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরেই ইভিএম হ্যাকিংয়ের অভিযোগে সরব।
মাস্কের সেই পোস্ট রিটুইট করে রাহুল গান্ধী বলছেন, “এদেশে ইভিএম যেন ব্ল্যাক বক্সের মতো হয়ে গিয়েছে। সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারও নেই। কেউ সেটিকে পরীক্ষা করে দেখতে পারে না। আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উঠেছে।” কংগ্রেস নেতার দাবি, “আমাদের গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।” সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে রাহুলের বক্তব্য, “স্বশাসিত সংস্থাগুলি যদি দায়িত্বশীল না হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রহসনে পরিণত হয়। গণতন্ত্রে প্রতারণার প্রবণতা বাড়তে পারে।”
নিজের পোস্টে একটি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টও শেয়ার করেছেন কংগ্রেস নেতা। যাতে দাবি করা হয়েছে, ভোটগণনার দিন নাকি গণনাকেন্দ্রের বাইরে থেকে গণনাপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন মহারাষ্ট্রের এক শিব সেনা (শিন্ডে) নেতা। ওই শিব সেনা নেতাকে গ্রেফতার করার পর জানা গিয়েছে, তার কাছে এমন কিছু কোড ছিল যাতে ইভিএম ‘আনলক’ করা যায়। যদিও ওই খবরের সত্যতা এখনও তদন্তসাপেক্ষ। তবে ইভিএমের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিরোধীরা যে এখমও আশ্বস্ত নন, সেটা রাহুল গান্ধীর এদিনের পোস্টে স্পষ্ট।
উল্লেখ্য, মুম্বাই উত্তর-পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্রের জয়ী প্রার্থী বিজেপির রবীন্দ্র ওয়েইকরের শ্যালক মঙ্গেশ পান্ডিলকরের বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে ফোন নিয়ে গণনাকেন্দ্রে ঢোকার অভিযোগ রয়েছে। তা-ও যে সে ফোন নয়! অভিযোগ, ইভিএমকে ‘আনলক’ করার জন্য যে ওটিপি লাগে, তা তৈরি করতে পারে এমন ফোন নিয়ে ঢুকেছেন মঙ্গেশ। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। রাহুল অবশ্য নিজের টুইটে এই সংক্রান্ত খবরের একটি অংশ পোস্ট করেছেন। বিরোধী জোট ‘ইনডিয়া’র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল এসপি-র প্রধান অখিলেশ যাদব বিতর্কে মুখ খুলে বলেছেন, “আমরা আবারও আমাদের পুরনো দাবিটা প্রকাশ্যে আনছি। তা হল ভবিষ্যতের সমস্ত নির্বাচন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে করতে হবে।”