ঢাকা | বঙ্গাব্দ

রাহুলের ছেড়ে দেওয়া ওয়েনাড়ে লড়বেন প্রিয়াঙ্কা

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের আমেঠি থেকে হেরে গেলেও কেরালার ওয়েনাড় জেতায় রাহুল গান্ধীকে। এ বার রায়বরেলীতে জেতার পরে সেই ওয়েনাড় ছেড়ে দিলেন রাহুল।
  • | ১৮ জুন, ২০২৪
রাহুলের ছেড়ে দেওয়া ওয়েনাড়ে লড়বেন প্রিয়াঙ্কা রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

অবশেষে নির্বাচনী রাজনীতিতে পা রাখলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী! রাহুল গান্ধীর ছেড়ে আসা ওয়েনাড়  আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন সোনিয়াকন্যা। ফলে ‘বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানো’ ওয়েনাড় ছেড়ে মা সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে দেওয়া আসন রায়বরেলি ধরে রাখছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সোমবার কংগ্রেসের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

চব্বিশের লোকসভা ভোটে গান্ধী-গড় রায়বরেলি ও নিজের কেন্দ্র ওয়েনাড় –  দুটি আসন থেকেই বিশাল ব্যবধানে জিতেছেন রাহুল গান্ধী। একটি আসন তাকে ছাড়তেই হতো। রায়বরেলি রেখে ওয়েনাড় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন রাহুল। আর ভাইয়ের ছেড়ে আসা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এখান থেকেই শুরু তার রাজনৈতিক কেরিয়ার।

রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বহুদিন ধরেই। কিন্তু ভোটে লড়াইয়ে সোনিয়াকন্যার আগমন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে জল্পনা-কল্পনা চলেছে। বিশেষত বড় কোনও নির্বাচনের মুখে ভেসে ওঠে তার নাম। এতদিন দলীয় অভ্যন্তরীণ বৈঠক, প্রচারে সক্রিয় থাকলেও সরাসরি ভোটের লড়াইয়ে প্রিয়াঙ্কা এই প্রথম। ভাইয়ের ছেড়ে আসা ওয়েনাড় আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাড়িতে আলোচনার পরে সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল বলেন, ‘‘আমার কাছে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল। কারণ ওয়েনাড়ের মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। রায়বরেলি এবং ওয়েনাড়ের মানুষের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। ওয়েনাড় ছাড়ছি। প্রিয়াঙ্কা লড়বেন ওয়েনাড় থেকে।’’

খড়্গের বাড়িতে আয়োজিত ওই বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা, এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, এই প্রথম গান্ধী-নেহরু পরিবারের কোনও রাজনীতিক শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারত থেকে জীবনে প্রথম বার লোকসভা ভোটে লড়তে চলেছেন। রাহুল এবং তার দাদি দক্ষিণ ভারত থেকে লোকসভা ভোটে লড়ে জিতলেও জীবনের প্রথম নির্বাচন উত্তরপ্রদেশ থেকে লড়েছেন। সোনিয়া গান্ধী ১৯৯৯ সালে প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনে লড়তে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলির পাশাপাশি কর্নাটকের বল্লালিকেও বেছে নেন।

রায়বরেলিতে এ বার রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন রাহুল। এই আসনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন সোনিয়া। তারও আগে রায়বরেলি থেকে কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তবে কংগ্রেসের এই পুরনো গড়ে রাহুল এ বছর পেয়েছেন মা সোনিয়ার থেকেও বেশি ভোট। বিজেপির প্রার্থীকে হারিয়েছেন প্রায় চার লক্ষ ভোটে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের আমেঠি থেকে হেরে গেলেও কেরালার ওয়েনাড় জিতিয়েছিল রাহুলকে। এ বার রায়বরেলিতে জেতার পরে সেই ওয়েনাড় ছেড়ে দিলেন রাহুল।

সোমবার বৈঠকে এই ঘোষণার পর রাহুল বলেন, “রায়বরেলি, ওয়েনাড় আমায় যে ভালবাসা দিয়েছে, সারাজীবন মনে রাখব। প্রিয়াঙ্কা ওয়েনাড় থেকে নির্বাচনে লড়বে। তবে মাঝেমধ্যেই যাব। যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, পূরণ করা হবে। কোন কেন্দ্র বাছব, তা নির্ণয় করা খুব কঠিন ছিল আমার কাছে। পদে না থাকলেও ওয়েনাড়ের সঙ্গেই থাকব। আপনারা ভাববেন, এখন থেকে আপনাদের দু’জন সাংসদ। প্রিয়াঙ্কা জিতবেই, আমি আশাবাদী। সঙ্গে আমিও থাকব।” আর প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য, ”ওয়েনাড়কে রাহুলের না থাকা বুঝতেই দেব না। ভাই যেমন বলল, ওয়েনাড়ে ও থাকবে, আমিও তেমন রায়বরেলির লোকদের সঙ্গে থাকব।” এর পর রাহুল মজার ছলে বলেন, ”তাহলে এবার থেকে ওয়েনাড়, রায়বরেলি – দু জায়গাতেই দুজন করে সাংসদ থাকবে।”

২০১৪ সালে ৪৪ এবং ২০১৯-এ ৫২টি আসনে জেতা কংগ্রেস এ বার লোকসভা নির্বাচনে ৯৯টি আসন জিতে ‘প্রধান বিরোধী দল’-এর মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেছে। ফলে এক দশক পরে লোকসভায় ফিরতে চলেছে ‘বিরোধী দলনেতা’ পদ। কেরালার ওয়েনাড় এবং উত্তরপ্রদেশের রায়বরেল দু’টি আসন থেকেই সাড়ে তিন লক্ষের বেশি ব্যবধানে জয়ী রাহুলই এ ক্ষেত্রে দলের ‘পছন্দ’ বলে ৮ জুন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জল্পনা ছিল, সোমবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। কিন্তু রাহুল বা তার দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও বার্তা মেলেনি।