দুবছর পেরিয়ে গেলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ছবির কোনও বদল ঘটেনি। হামলা পালটা হামলা, মৃত্যুমিছিল, স্বজনহারা কান্না সব কিছুই অব্যাহত। গত কয়েকমাসে ইউক্রেনে হামলার ধার তীব্র করেছে রাশিয়। যার ফলে বাড়ছে প্রাণহানি। তাই শান্তির পথ খুঁজতে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় ‘ইউক্রেন পিস সামিট’। যার নিট যোগফল শূন্যই।
১৫ ও ১৬ জুন, দুদিন সুইজারল্যান্ডের বার্গেনস্টকে অনুষ্ঠিত হয় ইউক্রেন শান্তি সম্মেলন। যেখানে যোগ দেয় অন্তত ৯০টি দেশ। ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-সহ অন্যান্য রাষ্ট্রনেতারা। আলোচনা শেষে ৮০টি দেশ যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করলেও সেই তালিকায় ছিল না ভারত।
যার কারণ হিসাবে ভারত জানিয়েছে, ‘যখন কোনও প্রস্তাব রাশিয়া ও ইউক্রেন দুদেশের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে তখনই শান্তির পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। এই যুদ্ধে ভারতের অবস্থান আগে যা ছিল এখনও তাই আছে। আমরা সবসময় কুটনৈতিক স্তরে আলোচনা ও বৈঠকের আমরা সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসী। আর সেটা করতে হবে দুপক্ষকেই। এই নীতি মেনেই আমরা এই বৈঠকে যোগ দিয়েছি। দুদেশের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধানই স্থায়ী শান্তি আনতে পারে। তাই আমরা যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিনি।’
এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি রাশিয়াকেই। মনে করা হচ্ছে, এটাই প্রধান কারণ ভারতের স্বাক্ষর না দেওয়ার। কারণ, রাশিয়ার যোগদান ও আলোচনা ছাড়া যে ইউক্রেনে শান্তি ফিরবে না তা স্পষ্ট। অন্যদিকে, ৮০টি দেশ এই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিয়ে জানিয়েছে, যে কোনও শান্তি আলোচনার ভিত্তি হবে ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা।
বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে ঘুরিয়ে রাশিয়ার উপরই চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এর অর্থ, ইউক্রেনের অধিকৃত অঞ্চলগুলো থেকে পিছু হটতে হবে রুশ সেনাকেই। যা স্বাভাবিকভাবেই মানবেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফলে এই সম্মেলনের নিটফল যে শূন্যই তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আন্তর্জাতিক এই সামিটের আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে মস্কো জানায়, ‘এই সম্মেলন সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা এই বৈঠকে আগ্রহী নই।’ আর এই শান্তি বৈঠকের আগে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিয়েভকেই শর্ত বেঁধে দেন পুতিন। তার বক্তব্য, “যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতেই পারি। কিন্তু তার জন্য ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। তাহলেই আলোচনায় বসতে পারি। ইউক্রেনকে দোনেতস্ক, লুহানস্ক, ঝাপরজঝিয়া ও খেরসন থেকে পুরোপুরিভাবে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। তবেই শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে বৈঠকে বসব।” যা নিয়ে সুইজারল্যান্ডের বৈঠকে কোনও কথাই বলা হয়নি। ফলে বিভিন্ন দেশের হস্তক্ষেপেও এই যুদ্ধের কোনও রফাসূত্র মিলল না।