রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদে ১ মে সকাল ১১ টায় রাজশাহী বাস টার্মিনাল এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ।
এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাজশাহী বাস টার্মিনালের সামনে প্রধান সড়ক বাস ও বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। যানবাহন চলাচলে দেওয়া হয় বাঁধা। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অর্থ আত্মসাৎ এর ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশা দিলে বেলা বারোটার দিকে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ উঠিয়ে নেয়।
এর আগেও সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে শ্রমিক অর্থ আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন। এর আগে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০২২ সালে সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনের সাবেক কোষাধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জনি।
তিনি বলেন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন নেতাকে শ্রমিকেরা নির্বাচিত করেছেন তাদের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নের জন্য। কিন্তু হাজার হাজার শ্রমিকের টাকা আত্মসাৎ করে জীবন ও জীবিকা নিয়ে খেলায় মেতেছেন ইউনিয়নের নেতারা।
সংগঠনের আয় হলেও জমার খাতায় কারচুপি। প্রতিদিন রাজশাহীর মিনিবাস থেকে আঞ্চলিক কমিটির নামে প্রায় ২০০ গাড়ি থেকে ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। ঢাকার লোকাল গাড়ি থেকে ৩১০ টাকা করে তোলা হয়। কিন্তু খাতায় জমা হয় মাত্র ১০০ টাকা। ঢাকার কোচ থেকে প্রতিদিন হাজার টাকা আদায় করা হলেও জমার খাতায় নেই।
রাজশাহীর বাইরে বগুড়া ও রংপুর অঞ্চলের গাড়ি প্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা তোলা হলেও জমা হয় না। ১০১ জন শ্রমিকের নামে ৩০ টাকা করে তোলা হয়। জমার খাতায় যোগ হয় মাত্র ২০ টাকা করে।
এছাড়াও এর আগে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন সাধারণ শ্রমিকরা। ২০১৯ সালে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের পর থেকেই মাহাতাব সাধারণ শ্রমিকদের নানাভাবে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, হয়রানিসহ শ্রমিকদের জমি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ করে ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এসবের প্রতিবাদ করলেই সাধারণ শ্রমিকদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি সদস্য পদ স্থগিত করা হয়।
মাহাতাব হোসেন চৌধুরী সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া বেআইনিভাবে আনুমানিক ৭০০ কার্ড বিক্রি করেন। বর্তমানে এসব কার্ডের মূল্য দাঁড়ায় ২১ লাখ টাকা; যা সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী বাইপাস সংলগ্ন ললিতাহার মৌজার মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ১৯ কাঠা জমির (দলিল নম্বর-৯৪১৭) মধ্যে ১৬ কাঠা বিক্রি করেছেন পানির দামে।
মাত্র ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্য দেখিয়ে বাকি অন্তত ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মাহাতাব হোসেন।
বাস টার্মিনালের পাশে মেইন রোড সংলগ্ন শিরোইল মৌজায় অবস্থিত শ্রমিক ইউনিয়নের এক তলা আরসিসি পাকা বিল্ডিং হাশেম আলীর কাছে সম্প্রতি ১ কোটি টাকায় বিক্রয় করেন মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। কিন্তু ওই বিল্ডিং ও জমির বর্তমান মূল্য ৮ কোটি টাকা। যা একক ভাবে আত্মসাৎ করেন।
রাজশাহীতে প্রতিদিন বাস থেকে চাঁদা ওঠে অন্তত ৫০ হাজার টাকা; যা এক বছরে ১ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিন বছরে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবুও শ্রমিকরা শিক্ষা, ভাতা, কন্যা দায়, মৃত্যুকালীন টাকার অধিকার থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত। এ অর্থও সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।
রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল আলম সাজু জানান, রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলের। তার কাছে শ্রমিকদের পাওনা ৪ কোটি টাকার বেশি। তাকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও শ্রমিকদের অর্থ ফেরত না দেয়ায় প্রতিবাদস্বরূপ তারা আজকের এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।