ঢাকা | বঙ্গাব্দ

অভিবাসীদের প্রতি ‘নরম’ বাইডেন

মানতে দ্বিধা নেই, ‘ব্লু কলার জব’ অর্থাৎ, কম মজুরির কাজের মূল ভারটা এই অভিবাসীরাই সামলান। অভিবাসী আইনের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ঘোষণা।
  • | ২২ জুন, ২০২৪
অভিবাসীদের প্রতি ‘নরম’ বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

আইনের চোখরাঙানি সত্ত্বেও প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে, কখনও আলুর বস্তার ট্রাকে বা কাঁচা মাংসের ফ্রিজারে লুকিয়ে, কখনও বা ডুবসাঁতার দিয়ে সমুদ্র পার হয়ে বা সীমান্তের কাঁটাতার-প্রাচীর ডিঙিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। অনেকেরই নতুন দেশে নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় মাঝপথেই, পণ্যবাহী ট্রাকে দমবন্ধ হয়ে বা সমুদ্রে ডুবে প্রাণ হারিয়ে। যারা শেষ পর্যন্ত এ দেশে প্রবেশ করতে পারেন, তাদের পরিচয় হয় ‘অবৈধ অভিবাসী’।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) মধ্যরাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিবাসী-কল্যাণে একটি নতুন ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’-এ সাক্ষর করেছেন। এই নির্দেশ অনুযায়ী, মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ কিন্তু অভিবাসী হিসেবে অনথিভুক্ত, এমন যারা রয়েছেন, তাদের আর পত্রপাঠ দেশে ফেরত পাঠানো হবে না। তারা পাকাপাকি ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে এবং নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অন্তত দশ বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকলে চাকরির আবেদনের সুযোগও মিলতে পারে। ৪ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ এই প্রকল্পে উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

এই রায়ে খুশি এ দেশের স্প্যানীয়ভাষী অভিবাসীদের একটা বড় অংশ। ফুল্টন কাউন্টি স্কুলের সাফাইকর্মীর স্ত্রী মারিয়া বললেন, “কাগজপত্র থাকায় এ বার আত্মসম্মান নিয়ে চলতে পারব।”

বাইডেন হোন বা তার পূর্বসূরিরা, এ দেশের সব সরকারই জানে যে, কোনও ‘মহাপ্রাচীর’-এরও ক্ষমতা নেই অভিবাসীদের অদম্য জনস্রোত রোখার। এ দেশে ঢুকে পড়ার পরে এই অবৈধ অভিবাসীরা একটা নিজস্ব সমাজ গঠন করে নিজেদের মতো করে বাঁচার চেষ্টা করেন।

এই সব অভিবাসী অনেক সময়েই মার্কিন নাগরিকদের বিয়ে করে ‘নিশ্চিত’ করতে চান তাদের অবস্থান। কিন্তু যেহেতু তার অবৈধ ভাবে এ দেশে ঢুকেছেন, তাই ‘বিবাহ’ কোনও ভাবেই ‘নাগরিকত্ব’ নিশ্চিত করে না। সমস্যার সম্মুখীন হয় অবৈধ অভিবাসী মা-বাবার সন্তানরাও। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ফুল্টন কাউন্টির একটি স্কুলের একটি ক্লাস বন্ধ করে দিতে হয়, কারণ সেই এলাকার অভিবাসী সন্তানদের কোনও স্থায়ী বসবাসের প্রমাণপত্র ছিল না।

মানতে দ্বিধা নেই, ‘ব্লু কলার জব’ অর্থাৎ, কম মজুরির কাজের মূল ভারটা এই অভিবাসীরাই সামলান। অভিবাসী আইনের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ঘোষণা। যে কোনও দেশই তার নিজস্ব নৈতিকতার বুননে চলে। শুরু থেকেই অভিবাসীদের নিয়ে চলার কাঠামোয় বিশ্বাসী যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিনের ভুক্তভোগীদের সমস্যা খানিকটা অন্তত মিটেছে।

তবে বাইডেনের ‘সংবেদনশীল’ অভিবাসন নীতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভোটবাক্সে বড়সড় গর্ত তৈরি করতে পারে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কারণ, অনেকেই মনে করেন, এই সব বেআইনি অভিবাসী অধিকাংশই মাদকাসক্ত এবং অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত। তাদের পেছনে করের টাকা ব্যয় করতে বিরক্ত হন তারা। কাঠমিস্ত্রি হেন্ডারসন মার্টিনেজের কথায়, ‘‘এই আতিথেয়তার জন্য বাইডেন আজ অনেক প্রদেশেই অপ্রিয় হয়ে পড়েছেন।”