বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ফারাক্কা চুক্তির নবীকরণ হয়েছে শনিবার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা নিয়ে আপত্তি তুলল বাংলার শাসকদল তৃণমূল। অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে নবীকরণ করা হয়েছে। তৃণমূল এই চুক্তি নবীকরণকে বাংলাকে ‘বিক্রি করার পরিকল্পনা’ হিসেবেও বর্ণনা করছে। একই সঙ্গে তিস্তা চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূল বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজ্যের বুকে রাজ্যকে এড়িয়ে রাজ্যের স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কোনও কাজ করা সহজ হবে না।
তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, এই ধরনের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলা উচিত কেন্দ্রের। কিন্তু কেন্দ্র সরকার বাংলাকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে ফরাক্কা চুক্তি নবীকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
তৃণমূলের বক্তব্য, “ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তিতে রাজ্য সরকারও পক্ষ। কিন্তু নবীকরণের বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি। যা অত্যন্ত খারাপ।” পাশাপাশিই বলা হয়েছে, এই চুক্তি বাবদ রাজ্য সরকারের যে পাওনা টাকা, তা-ও বকেয়া রয়েছে। গঙ্গার ড্রেজিং বন্ধ হয়ে গেছে। যা বাংলায় বন্যা এবং ভাঙনের প্রাথমিক কারণ হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, শনিবার দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবীকরণে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমনকী তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ভারতের পক্ষ থেকে আগ্রহ দেখানো হয় বলে খবর। তাতেই আপত্তি তৃণমূলের। তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, “রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে এই ধরনের চুক্তি এগোতে পারে না। আমরাও এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।”
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানি নিয়ে চুক্তি হয় ভারতের। তাতে একাধিক রাজ্য সরকারও শরিক। যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূল বলছে, ২০১৭ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেছিলেন, বেড়িবাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, গঙ্গার ওই চুক্তিতে আসলে বাংলার সমুহ ক্ষতি হয়েছে। একাধিক জেলা বছর বছর প্লাবিত হচ্ছে। চুক্তির পর তিন দশকে রাজ্যের বহু জমি গেছে পদ্মা এবং গঙ্গার গ্রাসে। রাজ্যের অভিযোগ, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি হলেও সেসময় যে ভাবে নিয়মিত গঙ্গায় ড্রেজিং করার কথা ছিল সেটা করা হয় না। চুক্তির টাকাও দেওয়া হয়নি রাজ্যকে।
মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার একাংশে গঙ্গাভাঙন নিয়ে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে চিঠি লিখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চিঠির প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল বলেছে, দু’বছর আগে মমতাও বলেছেন, ফারাক্কা ব্যারেজের জন্যই বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকাকে ভাঙনের মুখে পড়তে হচ্ছে। যার ফলে মানুষের ভিটেমাটি যেমন যাচ্ছে, তেমনই ক্ষতি হচ্ছে চাষেরও।
বাংলার শাসকদলের তরফে খানিকটা হুঁশিয়ারির সুরেই তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী অন্য দেশের সঙ্গে কোনও বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত করার অধিকার কেন্দ্রের রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রকে এটাও বুঝতে হবে, রাজ্য সরকার সহযোগিতা না-করলে তিস্তা পানিবণ্টনের মতো চুক্তি থমকে থাকে। তিস্তা পানিবণ্টন নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থানের পর কেন্দ্রও সম্মত হয়েছে, বাংলাকে এড়িয়ে গিয়ে তারা কিছু করবে না। অনেকের মতে, রাজ্যকে এড়িয়ে ফারাক্কা চুক্তি নবীকরণ হওয়ায় তিস্তা চুক্তি আরও বিশবাঁও জলে চলে গেল।
ঢাকা
| বঙ্গাব্দ
