ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বিমানের ভাড়া জোটাতে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’!

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানে হওয়া যুদ্ধ সংক্রান্ত কয়েক লক্ষ গোপন ফাইল ২০১০ সালে নিজের ‘হুইসিলব্লোয়িং’ ওয়েবসাইট উইকিলিকসে ফাঁস করে দেন অ্যাসাঞ্জ।
  • | ২৭ জুন, ২০২৪
বিমানের ভাড়া জোটাতে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’! জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও তার স্ত্রী স্টেলা

১৪ বছরের আইনি যুদ্ধের শেষে সোমবার ব্রিটেনের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। পরে যুক্তরাষ্ট্র অধিকৃত ভূখণ্ডে গিয়ে আইন জটিলতা কাটিয়ে গোপন সামরিক ফাইল ফাঁস করায় অভিযুক্ত, উইকিলিক্‌‌স-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বুধবার (২৬ জুন) চার্ডার্ড ফ্লাইটে তার দেশ অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছলেন।

যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডস থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে অ্যাসাঞ্জকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরানোর জন্য সমাজমাধ্যমে আবেদন জানান তার স্ত্রী স্টেলা। বিমানভাড়া মেটাতে পাঁচ লক্ষ ২০ হাজার ডলার অর্থসাহায্যের আবেদনে বিপুল সাড়া মিলেছে। বুধবার রাতেই ৫২ বছরের অ্যাসাঞ্জ ক্যানবেরা ফিরেছেন। এ বার দুই সন্তানের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার পালা। এই প্রথম জেলের গরাদের বাইরে যারা দেখতে চলেছে তাদের বাবাকে।

লন্ডনের বেলমার্শ জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরেই হিথরো বিমানবন্দর থেকে চার্টার্ড বিমানে ব্যাঙ্কক যান অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকে রওনা হন প্রশান্ত মহাসাগরের যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত দ্বীপপুঞ্জ নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডসের অন্তর্গত সাইপানের উদ্দেশে। সাইপানেই মঙ্গলবার মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে তার মামলার শুনানি হয়। সেখানেই তাকে ‘মুক্ত’ ঘোষণা করেন বিচারক।

আদালতের নথি থেকে জানা গেছে, ‘উইকিলিকস’ ওয়েবসাইটে মার্কিন সরকারের গোপন নথি ফাঁসের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। ওই অপরাধে তার ৬২ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে হেফাজতে আর অ্যাসাঞ্জকে থাকতে হল না। কারণ, পাঁচ বছর তিনি ব্রিটেনের জেলে ছিলেন, তাই তার জেলের সাজার মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানে হওয়া যুদ্ধ সংক্রান্ত কয়েক লক্ষ গোপন ফাইল ২০১০ সালে নিজের ‘হুইসিলব্লোয়িং’ ওয়েবসাইট উইকিলিকসে ফাঁস করে দেন অ্যাসাঞ্জ। তার মধ্যে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সামরিক হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হচ্ছে সাধারণ মানুষের উপরে। অভিযোগ ওঠে, ২০০৭ সালে ইরাকে অভিযানের সময় মার্কিন সেনার ওই হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে দুই সাংবাদিকও মারা যান। ওই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরে শোরগোল পড়ে যায় বিশ্বে।

ইতিমধ্যে সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে দু’জন মহিলাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। সুইডেনে হস্তান্তর করা হলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে, এই আশঙ্কায় অ্যাসাঞ্জ রাজনৈতিক আশ্রয় নেন লন্ডনের ইকুয়েডরের দূতাবাসে। সেখানেই ছিলেন ২০১৯ পর্যন্ত। এর পরে ইকুয়েডর সরকার তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করায় ব্রিটিশ পুলিশ দূতাবাসে ঢুকে গ্রেফতার করে অ্যাসাঞ্জকে। তত দিনে বহু মানুষের চোখে তিনি বাক্‌স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুখ। অনেকের চোখে একটি দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা খলনায়ক। পরে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রত্যাহার করে সুইডেন।

২০২৩ সালে অ্যাসাঞ্জের যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তের বিষয়ে সিলমোহর দেয় লন্ডন হাই কোর্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর আটকাতে শেষ চেষ্টা করেন অ্যাসাঞ্জ। মার্চে অ্যাসাঞ্জের হস্তান্তর স্থগিত রেখে ব্রিটিশ আদালত জানায়, উইকিলিক্‌‌স প্রতিষ্ঠাতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না, এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। চলতি বছরের মে মাসে ব্রিটিশ আদালতের দুই বিচারক জানান, হস্তান্তরের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে পারবেন অ্যাসাঞ্জ। আর জুনে মার্কিন বিচার বিভাগ এবং উইকিলিক্‌‌স জানায়, তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাওয়ায় জেল থেকে মুক্তি পেলেন অ্যাসাঞ্জ।