লোকসভার ডেপুটি স্পিকার পদে কবে নির্বাচন হবে তা এখনও স্থির নেই। বিষয়টি স্পিকার এবং সরকারের হাতে। কিন্তু এই নির্বাচনকে ঘিরে বড় রাজনৈতিক চমক দিতে পারে বিরোধী জোট ‘ইনডিয়া’। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এসপি নেতা অখিলেশ যাদবের এখনও পর্যন্ত পরিকল্পনা, ওই পদে ‘ইনডিয়া’ মঞ্চের প্রার্থী করা হতে পারে ফৈজাবাদের সাংসদ অবধেশ প্রসাদকে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, এই নামটির পরামর্শ এসেছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে।
প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কেরালার কে সুরেশের নাম ভাবা হচ্ছিল, যিনি লোকসভার স্পিকারের পদেও ‘ইনডিয়া’র প্রার্থী ছিলেন। সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপর ধন্যবাদজ্ঞাপক আলোচনা চলার সময়েই বিরোধী বেঞ্চে অবধেশের নাম প্রস্তাব হিসেবে আসে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। তৃণমূল, কংগ্রেস সাংসদ এবং অখিলেশের মধ্যে চিরকুটে এই নামটি চালাচালি হয়। কার্যত লাফিয়ে ওঠেন অখিলেশ। রাহুলও আপাতত মেনে নিয়েছেন এই প্রস্তাব।
ফৈজাবাদের দু’বারের সাংসদ বিজেপির লাল্লু সিংহকে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে কার্যত ইতিহাস গড়েছেন অবধেশ। বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির রামমন্দিরকে সামনে রেখে হিন্দুত্বের জোয়ারকে উত্তরপ্রদেশের আট বারের বিধায়ক অবধেশ রুদ্ধ করে দিয়েছেন বলেই মনে করে রাজনৈতিক মহল।
অযোধ্যা যে লোকসভার অন্তর্গত, সেই ফৈজাবাদ কেন্দ্রেই সমাজবাদী পার্টির এই দলিত প্রার্থীর কাছে পরাজয় প্রবল অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে। আর সেই অস্বস্তিকেই খুঁচিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন ‘ইনডিয়া’র নেতারা। বিরোধীদের বক্তব্য, ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী যাকেই করা হোক, লোকসভায় সংখ্যার হিসাবে পরাজয় অনিবার্য। কিন্তু তা এখানে বিবেচ্য নয়।
অবধেশকে দাঁড় করিয়ে একটি জোরালো বার্তা দেওয়ার কথাই ভাবছেন বিরোধীরা। প্রথমত, অবধেশকে কেন্দ্র করে অযোধ্যায় বিজেপির লজ্জাজনক পরাজয়ের ভাষ্যকে জনমানসে আবার তুলে নিয়ে আসার সুযোগ পাওয়া যাবে। বারবার বিষয়টি নিয়ে সংসদের ভিতরে ও বাইরে সরব হবেন কংগ্রেস, এসপি, তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলির নেতারা। পাশাপাশি ৭৭ বছর বয়সি দলিতদের মধ্যে পাসি সম্প্রদায়ভুক্ত (যারা এক সময় ছিলেন অচ্ছুৎ এবং তাড়ি প্রস্তুকারক গোষ্ঠী) অবধেশকে দাঁড় করিয়ে সমাজের এই অত্যন্ত পিছিয়ে থাকা অংশের প্রতিও বিশেষ বার্তা দিতে চাইছেন বিরোধীরা। প্রসঙ্গত, অবধেশের রাজনীতিতে হাতেখড়ি উত্তরপ্রদেশের কৃষকনেতা তথা প্রধানমন্ত্রী চৌধরী চরণ সিংহের হাত ধরে।
এই ফৈজাবাদ কেন্দ্রে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে প্রায় ৬৫ হাজার ভোটে হেরে যান এসপি প্রার্থী। সেই কেন্দ্রে কোন মন্ত্রে এ বার জয়? অবধেশ বলেন, “দলিত ভাইবোনদের থেকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছি। দলিত সম্প্রদায় গত বারে বিজেপিকে সমর্থন করেছে। তা ছাড়া ওবিসি এবং সংখ্যালঘু ভোটও আমরা পেয়েছি।” ফলে তাঁকে দাঁড় করিয়ে এই সম্প্রদায়গুলির প্রতি নির্দিষ্ট সদর্থক বার্তা দিতে পারবে বলে মনে করছেন ‘ইনডিয়া’র নেতারা।