ঠিক যেন কারাগারের সেল! খুবই ছোট্ট একটি কক্ষ। তাতে নেই কোনো ল্যাপটপ কিংবা ফোন। শুধুমাত্র ছোট একটি ছিদ্র দিয়েই বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় এই কক্ষ থেকে। মনে হয় যেন দেয়ালগুলোই এই কক্ষের বাসিন্দাদের একমাত্র সঙ্গী। এমন ছোট ছোট কক্ষেই নিজেদের বন্দি করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অসংখ্য মা-বাবা।
‘বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে রোববার বলা হয়েছে, ছোট্ট এসব কক্ষগুলোতে যেসব মা-বাবা নিজেদের বন্দী করছেন তাদের সবারই অন্তত একজন সন্তান রয়েছে, যে সমাজ এমনকি বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেই সন্তানের মানসিক অবস্থা উপলব্ধি এবং তার প্রতি আরও সহমর্মী হতেই নিজেদের বন্দি করছেন মা-বাবারা।
এ লক্ষ্যে ‘হ্যাপিনেস ফ্যাক্টরি’ নামে একটি এনজিও প্রকল্পের অধীনে অন্তত ১৩ সপ্তাহের জন্য বন্দি হচ্ছেন মা-বাবারা। দেশটির নতুন প্রজন্মের মাঝে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত শতকের ৯০-এর দশক থেকেই এই প্রবণতা বাড়তে শুরু করে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এ ধরনের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের ‘হিকিকোমোরি’ বলা হয়।
মূলত সমাজ কিংবা মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করে, পড়াশোনা জলাঞ্জলি দিয়ে দীর্ঘদিনের জন্য নিজের ঘরে একা একা বসবাস করে হিকিকোমারিরা। এমনকি মা-বাবা কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ কমে যায়।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১৯ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ১৫ হাজার তরুণ-তরুণীর ওপর চালানো একটি জরিপে দেখা গেছে, তাদের ৫ শতাংশেরও বেশি ‘হিকিকোমারি’র মতো বেঁচে আছেন। এ হিসেবে দেশটি এই বয়সী মোট জনসংখ্যার অনুপাতে প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার মানুষ হিকিকোমারি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হারও বেড়েছে।
‘হ্যাপিনেস ফ্যাক্টরি’র ছোট্ট কক্ষে বন্দি হওয়া মা-বাবাদের মধ্যে জিন ইয়ং-হে এবং পার্ক হ্যান-সিল অন্যতম। তাদের মধ্যে জিন ইয়ং হের ছেলে ৩ বছর নিজের বেডরুম থেকেই বের হয় না। এর আগে সবকিছুই ঠিক ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু এমন সময় বিচ্ছিন্নতা তাকে সবকিছু থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
অন্যদিকে, পার্ক হ্যান-সিলের ২৬ বছর বয়সী ছেলে সাত বছর আগে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কয়েকবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এখন সে আর ঘর থেকেই বের হয় না। পার্কের স্ত্রী অবশ্য ছেলেকে একজন কাউন্সেলরের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু ছেলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওষুধ সেবন করতে অস্বীকার করে এবং ভিডিও গেম খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ছেলের কাছাকাছি হওয়ার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করছেন পার্ক। ভাবছেন, নিজে কিছুদিন বন্দি থাকলে হয়তো ছেলের মনের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবেন তিনি।