কোথাও গুজবের জেরে, কোথাও চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়। আর এতে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে রোববার হুগলির তারকেশ্বরে নাইটা মাল পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রানাবাঁধে। সেখানে গাড়িচালক ২৩ বছর বয়সি বিশ্বজিৎ মান্নাকে স্থানীয়রা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের সন্দেহ— বিশ্বজিৎ গাড়ি চুরি করেছে।
তবে পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় একটি পরিবারের বাবা, ছেলে ও তাদের কিছু বন্ধু মিলে বিশ্বজিৎকে বেধড়ক মারে। মারের চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা রাত দুইটা নাগাদ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশ বাবা-ছেলে বিকাশ সামন্ত ও দেবকান্ত সামন্তকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে চোপড়ায় একটি ভয়ংকর ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে এক নারী ও এক পুরুষকে হাত বেঁধে পেটানো হয়। দুজনেই রাস্তায় পড়েছিলেন। যুবকের দেহে শার্ট ছিল না। নারীর দেহে নাইটি ছিল। তাদের লাথিও মারা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ তাজিমুল হক, এলাকায় যার নাম জেসিবি।
পুলিশ তাজিমুলকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ বলেছে, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার লক্ষ্মীপুর পঞ্চায়েতের দিঘলগাঁও গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী দল ও গ্রামবাসীদের দাবি, তাজিমুল ওই গ্রামের তৃণমূল কোর কমিটির প্রধান এবং বিধায়কের ঘনিষ্ঠ। তার জোরেই গ্রামে তার শাসন চলতো। এক ব্যক্তি লুকিয়ে ওই ঘটনার ভিডিও করেছেন। তিনি এখন গ্রামছাড়া বলে জানা গেছে।
বিধায়ক হামিদুল বলেন, গ্রামবাসীরা একটু ভুল করেছে। কিন্তু ওই নারী বা তার স্বামী কোনো অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা টুইট করে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভয়ংকর ভিডিও সামনে এসেছে। তৃণমূল বিধায়ক আবার এটাকে সমর্থন করেছেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, বিধায়কের কথা শুনে মনে হচ্ছে, ভারতের মধ্যে আলাদা কোনো দেশ আছে, যেখানে ওদের আইন চলে। এসব তো মেনে নেওয়া যায় না। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ সেলিমের মতে, ওটা শুধু সালিসি সভা ছিল না। জেসিবি নামে গুণ্ডার মাধ্যমে বিচারের বুলডোজার চালানো হয়েছে। পুলিশের সাহায্যে তৃণমূলের এটাই নিয়ম।
তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, চোপড়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। পুলিশকে ধন্যবাদ, দাদাগিরি করা ওই জানোয়ারকে গ্রেফতার করার জন্য। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যারা বসে দেখছিল, তারাও সমান দোষী।
এদিকে পাণ্ডুয়ায় মনসা পুজোয় মাইক বাজানো নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে এক যুবককে রাস্তায় ফেলে বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। তার রক্তবমি শুরু হয়। একদিনের মাথায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়। অভিযোগ, ওই যুবক মাইক বাজানো নিয়ে প্রতিবাদ করেন। মাইক বাজানো নিয়ে প্রতিবাদের জেরে তাকে বেধড়ক মারা হয়।
ঝাড়গ্রামে চুরির সন্দেহে বেধড়ক মারের ফলে একজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বন্ধু অক্ষয়ের সঙ্গে সৌরভ সাউ স্কুটারে করে বেড়াতে যান। সেসময় তারা নির্মাণ সামগ্রী চুরি করেছে, এই অভিযোগে ব্যাপক পেটানো হয়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সৌরভ পরে মারা যান।
কলকাতার বৌবাজারের ছাত্রাবাসে ইরশাদ নামে এক যুবককে মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তিনি চাঁদনী চক এলাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। তাকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারা হয়। তিনি যেখানে কাজ করতেন, সেই মালিককে ফোন করেন। তিনি পুলিশে খবর দেন। কিন্তু ইরশাদকে বাঁচানো যায়নি।
সল্ট লেকেও সম্প্রতি মোবাইল চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তার আগে শিশুচুরির অভিযোগে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটিতে দুই নারীকে মারধর করা হয়েছে।