পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেপ্তার সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। সোমবার (১ জুলাই) প্রকাশ্যে আসা এক মতামতে জেনেভা-ভিত্তিক জাতিসংঘের একটি মানবাধিকার সংস্থার ওয়ার্কিং গ্রুপ জানিয়েছে ইমরানকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া উচিৎ। খবর আল-জাজিরার।
জেনেভা-ভিত্তিক ইউএন ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন, এই অবিচারের উপযুক্ত প্রতিকার হবে ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তাকে ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য বিষয়াদির পাশাপাশি একটি কার্যকর অধিকার প্রদান করা।
জাতিসংঘের এই ওয়ার্কিং গ্রুপ চলতি বছরের ২৫ মার্চ এই মতামত প্রকাশ করে। তবে এটি জনসমক্ষে আসে ১ জুলাই। ওয়ার্কিং গ্রুপ তাদের মতামতে বলেছে, ইমরান খানকে আটকের কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না এবং মনে হচ্ছে রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করার উদ্দেশ্যে আটক করা হয়েছে। সুতরাং, শুরু থেকেই, সেই প্রসিকিউশনটি আইনের ভিত্তিতে ছিল না এবং কথিত একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে।
পাঁচজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত জাতিসংঘের ওই ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামত শোনা বাধ্যতামূলক নয়। তবে তাদের এই মতামত বেশ গুরুত্ব বহন করে। ওয়ার্কিং গ্রুপ বলেছে, ইমরান খানকে যে আইনি সমস্যার মধ্যে ফেলা হয়েছে সেটি মূলত তার এবং তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির বিরুদ্ধে ‘অনেক বৃহত্তর দমন অভিযানের’ অংশ।
ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতে আরো বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ইমরান খানের দলের সদস্যদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয় এবং তাদের নির্বাচনী সমাবেশগুলোকেও বাধাগ্রস্ত করা হয়। এছাড়া ‘নির্বাচনের দিনে ব্যাপক জালিয়াতি ও (কারচুপির মাধ্যমে) কয়েক ডজন সংসদীয় আসন চুরি’ করা হয় বলেও অভিযোগ করেছে জাতিসংঘের এই ওয়ার্কিং গ্রুপ।
অবশ্য পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশটির নির্বাচন কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বুধবার মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়া সাধারণ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে একটি প্রস্তাব পাস করে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ করার চেষ্টা করার অভিযোগ করে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবটিতে পাকিস্তানের নির্বাচনে কথিত অনিয়মের বিষয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টিও নির্বাচনে তাদের জয়কে নস্যাৎ করার জন্য কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।