‘টিল ডেথ ডু আস অ্যাপার্ট’- একমাত্র মৃত্যুই আমাদের আলাদা করতে পারবে। ভালোবাসার সময় অনেকেই এই কথাটি বলেন, কিন্তু কতজনে সেটা মেনে চলেন? কিংবা প্রকৃতি বা সময় কয়জনকে তা মেনে চলতে দেয়? ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক বৃদ্ধা মৃত স্বামীর বুকে মাথা রেখে মারা গিয়ে প্রমাণ করলেন কেউ কেউ কথা রাখে।
স্বামীর মরদেহ বাড়ির উঠানে এসে পৌঁছামাত্রই কান্নার রোল উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলেন স্ত্রী, চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলেন। স্বজন ও আশপাশের লোকজন তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। এরমধ্যেই স্পর্শ করলেন স্বামীর নিথর দেহ। কাঁদতে কাঁদতে মৃত স্বামীর বুকে মাথা রাখলেন। কয়েক সেকেন্ড পরই নিথর হয়ে গেলেন বৃদ্ধা।
স্বজনরা মনে করেন, বৃদ্ধা শোকে মূর্ছা গিয়েছেন। জ্ঞান ফেরাতে পানি ছিটানো হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও জ্ঞান ফেরেনি বৃদ্ধার। এরপর ডাক্তারও ডাকা হয়। কিন্তু তিনি এসে দেখেন সব শেষ। স্বামীর মরদেহ আসার মাত্র তিন মিনিটের মাথায় মৃত্যু হয় বৃদ্ধার।
মর্মস্পর্শী এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানা এলাকায়। বৃদ্ধা স্বামী-স্ত্রীর এমন বিদায়ে স্তব্ধ পুরো পরিবার ও প্রতিবেশীরা। শঙ্কর মণ্ডল (৮৫) ও নিয়তি মণ্ডলের (৬৮) প্রায় পঞ্চাশ বছরের সংসার। তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে, সবাই বিবাহিত। নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দেভরা সংসার।
তবে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন শঙ্কর। শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল তার। কয়েক দিন আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। মঙ্গলবার রাতেই মারা যান শঙ্কর। মৃতদেহ বাড়ির উঠানে রাখা হলে শেষবারের মতো স্বামীকে ছুঁতে গিয়ে তার বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী নিয়তি। সেটাই শেষ, আর ওঠেননি তিনি।
এদিকে একই দিনে বাবা-মাকে হারানো অনন্ত মণ্ডল বলেন, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে বাবা-মাকে কোনোদিন আলাদা থাকতে দেখিনি। সবকিছুতেই দুজনের মতামত এক ছিল। কখনও ঝগড়া হয়নি দুজনের। বাবা আমাকে বকছেন, কিন্তু মা এসে আমাকে আগলে রাখছেন— এমনটাও হয়নি। এমনই ছিলেন ওনারা। মৃত্যুও ওনাদের আলাদা করতে পারল না।
অনন্ত মণ্ডল আরও বলেন, খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও কোনো একটা জায়গায় যেন শান্তি পাচ্ছি।