দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন জো বাইডেন। তার এই সিদ্ধান্তের নেপথ্য কারণও এ বার প্রকাশ্যে আনলেন তিনি। বুধবার (২৪ জুলাই) দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে বাইডেন জানান, তিনি নতুন প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান। যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করতে এটাই সেরা উপায় বলেও দাবি করেছেন অশীতিপর এই রাষ্ট্রপ্রধান। নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এটাই বাইডেনের দেওয়া প্রথম ভাষণ। খবর বিবিবি, এএফপির।
বয়স এবং শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে গুঞ্জনের মধ্যেই রোববার (২১ জুলাই) নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান ৮১ বছর বয়সি বাইডেন। পছন্দের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম প্রস্তাব করেন তিনি। গত সপ্তাহেই কোভিডে আক্রান্ত হন বাইডেন। তার পর কিছু দিন তাকে নিভৃতবাসে থাকতে হয়। কোভিডমুক্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) হোয়াইট হাউসে ফেরেন বাইডেন। বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘ঠিক করেছি, নতুন প্রজন্মের হাতে আগামীর মশাল তুলে দেব। এটাই যুক্তরাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করার সেরা উপায়।’ একই সঙ্গে তার সংযোজন, ‘আমার কাজকে শ্রদ্ধা করি। এই অফিসকে সম্মান করি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভালবাসি আমার দেশকে। আপনাদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করতে পেরেছি, এটা আমার জীবনে সৌভাগ্যের বিষয়।’ নিজের বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের ‘ঝুঁকি’র বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। জানান, বিপদে থাকা গণতন্ত্রকে রক্ষা করা যে কোনও খেতাবের চেয়ে বেশি জরুরি।
রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী তথা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিভিশনে বিতর্কে বাইডেনের কথার খেই হারানো, মৃদু স্বরে বক্তব্য রাখা নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে আলোচনা শুরু হয়। সূত্র মারফত জানা যায়, হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টিটিভসের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির মতো বেশ কয়েক জন শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতানেত্রী বাইডেনকে ‘দলের স্বার্থে’ প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর আর্জি জানান। সেই তালিকায় আছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও।
প্রথমে ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে দাঁড়ানোর বিষয়ে প্রত্যয় দেখালেও শেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান বাইডেন। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা যায়, তাকে নিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে যাতে কোনও বিভাজন না থাকে, তা সুনিশ্চিত করতে চান বাইডেন। সেই দিকেই ইঙ্গিত করে বুধবার বাইডেন বলেন, ‘কঠিন পরিস্থিতিতে আমার দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রয়োজন।’ একই সঙ্গে আত্মপ্রশংসার সুরে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমার কাজ, দেশে এবং বিদেশে আমার নানা নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য আমার ভাবনা--- সব কিছুই দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু গণতন্ত্র বাঁচানোর যাত্রায় এই সব কিছু আগে আসতে পারে না।’
জো বাইডেন বলেন, ‘বিপদাপন্ন গণতন্ত্রকে রক্ষা করা অন্য যেকোনো কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মের কাছে আলোর মশাল হস্তান্তর করে আমার সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। এটাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়।’ টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে যাওয়া ৫৯ বছর বয়সী কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তিনি অভিজ্ঞ। তিনি বলিষ্ঠ। তিনি পারদর্শী।’
নভেম্বরের নির্বাচন ও দেশের গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে বাইডেন বলেন, ‘এখানে রাজা শাসন করেন না। বরং জনগণ শাসন করেন।’ জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার। ইতিহাস আপনার হাতে। ক্ষমতা আপনার হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা আপনার হাতে। আসুন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য একসঙ্গে কাজ করি।’