ঢাকা | বঙ্গাব্দ

নীতীশের ‘নারীবিদ্বেষী’ বক্তব্যে উত্তাল বিহার বিধানসভা

নীতীশের বক্তৃতার সময়ে আরজেডি বিধায়ক রেখা পাসওয়ান দাঁড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলে তাকে থামিয়ে নীতীশ বলেন, “আপনি একজন মহিলা। আপনি কিছুই জানেন না। বসে পড়ুন এবং শুনুন।”
  • | ২৬ জুলাই, ২০২৪
নীতীশের ‘নারীবিদ্বেষী’ বক্তব্যে উত্তাল বিহার বিধানসভা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের মহিলা-মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক। বুধবার এই নিয়ে উত্তাল বিহার বিধানসভা। জেডিইউ প্রধানকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে কটাক্ষ করেছে সে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি।

বুধবার (২৪ জুলাই) বিহার বিধানসভায় সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা চলছিল। সে রাজ্যে জাতগণনার পর অতিরিক্ত যে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, তাকে আইনি সুরক্ষা দিতে সংবিধানের নবম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান বিরোধীরা। সেই সময় ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী বিধায়কেরা। প্রায় একই সময়ে বক্তব্য রাখতে ওঠেন নীতীশ। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার সময়েই আরজেডি বিধায়ক রেখা পাসওয়ান উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করেন। তাকে থামিয়ে নীতীশ বলেন, ‌‌‘আপনি একজন মহিলা। আপনি কিছুই জানেন না। বসে পড়ুন এবং শুনুন।’ নীতীশের এই মন্তব্যের পরেই বিরোধী বেঞ্চ থেকে হইচই শুরু হয়ে যায়।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় রাজ্যের চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এ সময় তিনি বিধায়কদের আশ্বস্ত করেন, রাজ্যে ৬৫ শতাংশ কোটা বাস্তবায়নে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। পাটনা হাইকোর্ট এই পরিমাণ কোটা বাস্তবায়ন না করা পক্ষে মত দিলেও বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বিহার সরকার। এ সময় বিরোধী দল আরজেডি, কংগ্রেস ও বাম দলগুলো ‘হায়, হায়’ স্লোগান দিতে শুরু করে। তাদের অভিযোগ, সরকার কোটা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে না। সরকার বিশেষ ক্যাটাগরি ব্যবস্থা ও সংবিধানে বর্ণিত নবম তফসিলে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

জবাবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাটনা হাইকোর্ট কোটা বৃদ্ধির বিষয়টি বাতিল করেছেন। কিন্তু আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি। তিনি এ সময় আরও বলেন, বিহার সরকার কেন্দ্র সরকারকে সংবিধানের নবম তফসিলে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলেছি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই নিশ্চয়তার পরও বিরোধী বিধায়কেরা ‘হায়, হায়’ করতে থাকেন।

তখন নিতীশ কুমার নারী বিধায়ক রেখা পাসওয়ানের প্রতি আঙুল তাক করে বলেন, আপনি একজন মহিলা, আপনি বুঝবেন না। এই লোকেরা নারীর অগ্রগতি হতে দিচ্ছে না। আপনি একজন মহিলা, আপনি আসলে কিছুই জানেন না। এরপর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী রেখা দেবীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আরজেডির শাসনামলে কি নারীদের কথা বলার অনুমতি ছিল? আরজেডি সরকার কি নারী ক্ষমতায়ন করেছে? আমিই ২০০৫ সালের পর নারীদের এগিয়ে নিয়েছি। আজ আপনি ফালতু কথা বলছেন। আমি যা বলি, তা ভালো করে শোনেন।

পরে নীতীশ নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেও বিতর্কের ঝড় থামেনি। বিরোধীদের দাবি মেনে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাই কোর্ট সংরক্ষণ আইন খারিজ করলেও আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছি। আইনগুলি সংবিধানের নবম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার আর্জি জানিয়ে আমরা কেন্দ্রের কাছেও অনুরোধ করেছি।’ বিতর্কের মধ্যে নীতীশ এ-ও দাবি করেন যে, তার আমলেই মেয়েরা তাদের প্রাপ্য সব কিছু পাচ্ছেন।

তবে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ হয়নি। আরজেডি নেতা ও বিহারের বিরোধী দলীয় নেতাতথা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব নীতীশকে আক্রমণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, ‘মহিলাদের সম্পর্কে সস্তা, অপ্রত্যাশিত, অশালীন এবং নিচু মানের মন্তব্য করা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এটা রাজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ভয়াবহ একটি বিষয়।’

নীতীশের একটি পুরনো মন্তব্যের কথা টেনে এনে তেজস্বী আরও জানান, কিছু দিন আগে বিজেপির এক আদিবাসী শ্রেণির দলিত মহিলা বিধায়কের সৌন্দর্য নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন জেডিইউ নেতা।  আজ তিনি দুইবারের তফসিলি জাতির নারী বিধায়ক রেখা পাসওয়ানকে নিয়ে মন্তব্য করলেন। মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ মহাবিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত, মধ্যস্থতাকারী, দোভাষী এবং সৃষ্টিকর্তা হয়ে উঠেছেন। তিনি ছাড়া কেউ কিছু জানেন না।