ঢাকা | বঙ্গাব্দ

মোদির বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এলেন ক্ষুব্ধ মমতা

রাষ্ট্রপতি ভবনে মোদির নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেরিয়ে এসে বলেন, ‘মাইক বন্ধ করে অপমান করা হয়েছে।’
  • | ২৭ জুলাই, ২০২৪
মোদির বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এলেন ক্ষুব্ধ মমতা রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, ‘পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে অপমান করা হয়েছে।’

বিরোধী জোট ‘ইনডিয়া’র সাত জন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বৈঠক বয়কট করলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সকালে রাইসিনায় হাজির হন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে তিনি বলেন, ‘অন্য কয়েক জনকে ২০ মিনিটের বেশি বলার সুযোগ দেওয়া হলেও আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে বৈঠক ছেড়ে চলে এসেছি।’

অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু ২০ মিনিট বলা সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান মমতা। তার দাবি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত, ছত্তিসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাইও বলায় যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন। তার মাইক বন্ধের ঘটনাকে সরাসরি ‘অপমান’ বলেও চিহ্নিত করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র আমিই বৈঠকে হাজির হই। কিন্তু বলতে দেওয়া হল না। আরও কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই মাইক বন্ধ করে অপমান করা হল।’

নীতি আয়োগের বৈঠকে তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন জানিয়ে মমতা বলেন, ‘আমি বলেছি আপনাদের (কেন্দ্রীয় সরকার) কোনও রাজ্য সরকারের প্রতি বৈষম্য করা উচিত নয়। কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু আমাকে মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলতে দেওয়া হয়। আমার আগে লোকেরা ১০-২০ মিনিট কথা বলেছেন। বিরোধী দল থেকে আমিই একমাত্র অংশগ্রহণ করেছি। তবুও আমাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। এটা অপমানজনক।’ মমতা জানিয়েছেন, এর পরে নীতি আয়োগের আর কোনও বৈঠকে তিনি থাকবেন না।

অতীতে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী একাধিক বার লোকসভায় তার মাইক বন্ধের অভিযোগ তুলেছেন। এ বার অঙ্গরাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মাইক বন্ধ করে বিরোধীদের ‘কণ্ঠরোধ’-এর অভিযোগ উঠল। প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিল্লি যাওয়ার আগেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তার অভিযোগ ছিল, বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে। মমতা বলেন, ‘বাজেটে যে ভাবে বিরোধী রাজ্যগুলিকে বঞ্চনা করা হয়েছে, সেটা মানতে পারছি না। এক দিকে ইকনমিক ব্লকেড, পলিটিক্যাল ব্লকেড, এর সঙ্গে বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যকে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা, তার চরম নিন্দা করছি। মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাগের কথা বলছেন!’

সেই সঙ্গে মমতা বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি, ওদের দলের অনেক নেতাও বিহার-ঝাড়খণ্ড-আসাম-বাংলাকে ভাগ করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিচ্ছেন। কড়া নিন্দা করছি এর। বিহার, ঝাড়খণ্ড, আসাম এবং বাংলাকে ভাগ করা মানে গোটা দেশকে ভাগ করা। আমরা একে সমর্থন করি না।’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলা ভাগের দাবির প্রতিবাদ জানাতেই নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। তার কথায়, ‘বৈঠকে থাকব কিছু ক্ষণ। কিছু বলতে দিলে বলব। আর না হলে প্রতিবাদ করব। বাংলার হয়ে কথা বলব।’ তার ওই মন্তব্যেই বৈঠক থেকে ওয়াক আউটের ইঙ্গিত ছিল বলে বিজেপির একাংশের অভিযোগ। এর আগেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে তাকে বলতে না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মমতা। শনিবার দেখা গেল, মমতার অনুমানই সঠিক। তার অভিযোগ, তাকে মাত্র পাঁচ মিনিট বলতে দেওয়া হয়। তারপর বন্ধ করে দেওয়া হয় মাইক। যার প্রতিবাদে তিনি বৈঠক ছাড়েন।

প্রসঙ্গত, কংগ্রেস শাসিত তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী— কর্নাটকের সিদ্দারামাইয়া, তেলঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি, হিমাচল প্রদেশের সুখবিন্দর সিংহ সুখু আগেই কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনায় প্রতিবাদে নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কটের ঘোষণা করেন। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী আম আদমি পার্টির নেতা ভগবন্ত মান, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়নও বৈঠক বয়কট করেন একই অভিযোগে। মমতা জানান, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বৈঠকে থাকতে পারেন। কিন্তু তিনিও শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুপস্থিত ছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৈঠকে ছিলেন না বিজেপির সহযোগী জেডিইউর প্রধান তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও!