ইউক্রেনের শীর্ষ কমান্ডার অলেক্সান্ডার সিরস্কি সোমবার (১২ আগস্ট) দাবি করেছেন, রাশিয়ার অন্তত ১ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের হাতে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক সামরাস্ত্র পেয়ে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশ চাঙ্গা ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। সিরস্কি বলেন, আড়াই বছরের যুদ্ধে এটি ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অর্জন। রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে সীমান্ত অভ্যন্তরে আমাদের সেনাদের অভিযান ৭ দিন অতিবাহিত হয়েছে, তারা স্পষ্টতই এখন চাপে আছে। কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন তার হামলা অব্যাহত রেখেছে। খবর বিবিসির।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া আমাদের ওপরে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, এখন আমরা তাদেরকে সেটি ফিরিয়ে দিচ্ছি। পুতিন যতই যুদ্ধ করতে চান না কেন আমরা রাশিয়াকে শান্তি স্থাপনে বাধ্য করবো। এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন সিনেটর লিন্ডকে গ্রাহাম ইউক্রেনের এই হামলাকে সাহসী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। এসময় তিনি বাইডেন প্রশাসনের প্রতি ইউক্রেনকে সহায়তার আহ্বান জানান।
কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর ব্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভ বলেছেন, আমরা আক্রান্ত এলাকাটি থেকে অন্তত ৫৯ হাজার লোককে সরিয়ে নিয়েছি। ২৮টি গ্রাম ইতোমধ্যে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে চলে গেছে, এতে অন্তত ১২ বেসামরিক রুশ নাগরিক নিহত হয়েছেন। এখানে পরিস্থিতি খুবই কঠিন অবস্থায় রয়েছে।
গভর্নর আরও বলেন, আমরা অঞ্চলটি থেকে আরো ১ লাক ২১ হাজার লোককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদিও অধিকৃত অঞ্চলটিতে এখনো ২ হাজারের মত রুশ নাগরিক আটকা পড়ে আছেন। স্থানীয়দের ইউক্রেনের মিসাইল হামলা থেকে রক্ষা করতে ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা জারি করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে হামলা থেকে রক্ষা পেতে বেজমেন্টে আশ্রয় নিতে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই হামলাকে উসকানি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি রুশ বাহিনীকে বলেন, আমাদের ভূখণ্ড থেকে শত্রুদের লাথি মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত মন্তব্যে বলেন, আমাদের শত্রুদের স্পষ্ট লক্ষগুলো হলো বিভেদ ও কলহ সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণ রুশ নাগরিকদের ভয় দেখানো। রাশিয়ার সমাজব্যবস্থার ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করা। রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য হবে আমাদের ভূমি থেকে শত্রুদের বিতাড়িত করা।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী সময়মতই তার কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আমরা এখনো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে রাশিয়ার অভ্যন্তর থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইউক্রেন কিভাবে কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করলো। এদিকে, রাশিয়ার মিত্র বেলারুশ তার আকাশসীমায় অজ্ঞাত ড্রোন প্রবেশের অভিযোগ করেছে। এ দাবির পরপরই তারা সীমান্তে সেনা সংখ্যা বাড়ানো শুরু করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্রিটিশ সামরিক সূত্র বিবিসিকে বলেছে মঙ্গলবার রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা শুরুর পর তারা নতুন করে বিপদ ডেকে এনেছে। এর ফলে মস্কো এতোটাই ক্ষুব্ধ হবে যে বেসামরিক জনসংখ্যা এবং অবকাঠামোর উপর তারা হামলা দ্বিগুণ করতে পারে।