ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর আস্থা হারাচ্ছে ঘনিষ্ট মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে তাকে গদি থেকে সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে! সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছে রাশিয়ার গোয়েন্দা দপ্তর ‘ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসভিআর)’। খবর ইরানের বার্তা সংস্থা মেহের নিউজের।
জেলেনস্কির কাজকর্ম নিয়ে নাকি মোটেও সন্তুষ্ট নন জো বাইডেন এবং তার বন্ধু দেশগুলি। আর সেই কারণেই নাকি জেলেনস্কিকে সরানোর পরিকল্পনা চলছে। রাশিয়ার গোয়েন্দা দফতর এ-ও দাবি করেছে, ইউক্রেনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা-ও নাকি ঠিক করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। শোনা যাচ্ছে, জেলেনস্কিকে সরিয়ে সেই জায়গায় বসানোর জন্য ইউক্রেনের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরসেন আভাকভের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
কিন্তু ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বিরোধিতা করে যে জেলেনস্কির সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র ঢালের মতো দাঁড়িয়ে গেছে, বাইডেন সরকার তাকেই গদি থেকে সরাতে চাইছে বলে দাবি উঠার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে এসভিআর দাবি করেছে, মার্কিন দাতারা জেলেনস্কির প্রতি ক্রমশ অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছেন। কারণ, রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে যে কোটি কোটি ডলার ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তা কী ভাবে খরচ করা হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করেছেন তারা।
দাবি উঠেছে, যুদ্ধের নামে যে অর্থ সাহায্য জেলেনেস্কি যুক্তরাষ্ট্র এবং বন্ধু দেশগুলির থেকে পাচ্ছেন, তা ব্যক্তিগত ভোগবিলাসে নয়ছয় করতে শুরু করেছেন। আর তা নিয়ে তার উপর বিরক্ত মার্কিন রাজনীতিক থেকে দাতাগোষ্ঠিরা। প্রভাবশালী মার্কিনীরা বলতে শুরু করেছেন, ইউক্রেনের হিতের কথা আর ভাবছেন না জেলেনস্কি। বরং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একের পর এক এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যা, ইউক্রেনের জন্য ‘ক্ষতিকর’।
সম্প্রতি রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে ঢুকে হামলা চালাতে শুরু করেছে ইউক্রেনীয় সেনারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খোদ জেলেনস্কি। জেলেনস্কির বিবৃতি ইতিমধ্যেই বিশ্ব জুড়ে হইচই ফেলেছে। রাশিয়া যেমন চমকে গিয়েছে, তেমনই অবাক হয়েছে ইউক্রেনের বন্ধু দেশগুলিও। যুক্তরাষ্ট্রও নাকি ইউক্রেনের এই পদক্ষেপের কথা আগে থেকে ঠাওর করতে পারেনি। এ নিয়েও নাকি যুক্তরাষ্ট্র বিরক্তি প্রকাশও করেছে।
রুশ গোয়েন্দা দফতরের মতে, এই সব কারণেই আরও নিয়ন্ত্রিত এবং কম দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে জেলেনেস্কির পদে বসাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেখান থেকেই নাকি আভাকভের কথা মাথায় এসেছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসেন আভাকভ। ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। এসভিআরের দাবি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাদের নাম উঠে আসছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে ‘উপযুক্ত’ মনে করা হচ্ছে আভাকভকেই।
রাশিয়ার গোয়েন্দা দপ্তরের মতে, যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে যে পশ্চিমা দেশগুলি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আভাকভের ‘ঘনিষ্ঠ’ যোগাযোগই তাকে বাকি প্রার্থীদের থেকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে। এসভিআরের দাবি, হোয়াইট হাউস মনে করছে যে ইউক্রেনের নেতৃত্বের পরিবর্তন হলে রাশিয়ার সঙ্গে সমস্যা সমাধানে আরও ভাল ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে পশ্চিমা দেশগুলি।
এসভিআর দাবি করেছে, আভাকভকে গদিতে বসানো নিয়ে ইউক্রেনের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট পিয়োত্র পোরোশেঙ্কো, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো এবং জেলেনস্কির নিজের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও রয়েছেন। এ বছরের জুনেও এসভিআর ইঙ্গিত দিয়েছিল, ‘প্রয়োজন ফুরোলে’ জেলেনেস্কিকে পদ থেকে সরানোর চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের জোটসঙ্গীরা।