পবিত্র কোরআন শুধু মানুষের আত্মার চিকিৎসার জন্য নয়, কোরআনের মাধ্যমে মানুষের দৈহিক চিকিৎসাও হয়। যেকোনো রোগ নিরাময় করার অসম্ভব এক আধ্যাত্মিক শক্তি নিহিত আছে কোরআনের প্রথম সুরা ফাতিহায়। যারপরনাই এই সুরার আরেক নাম ‘সুরাতুশ শিফা’। শিফা অর্থ রোগ নিরাময়।
এ সুরা দিয়ে যেহেতু ঝাড়ফুঁক করা যায় তাই রাসুল (সা.) এ সুরাকে ‘রুকইয়া’ নামেও অভিহিত করেছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.)-এর কয়েকজন সাহাবি আরবের এক গোত্রের কাছে গেলেন। গোত্রের লোকেরা তাদের কোনো আতিথেয়তা করল না। তারা সেখানে থাকতেই হঠাৎ সেই গোত্রের নেতাকে সর্প দংশন করল। তখন তারা এসে বলল, আপনাদের কাছে কি কোনো ওষুধ আছে কিংবা আপনাদের মধ্যে ঝাড়ফুঁককারী লোক আছেন কি? তারা জবাব দিলেন, হ্যাঁ। তবে তোমরা আমাদের কোনো আতিথেয়তা করোনি। কাজেই আমাদের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত আমরা তা করব না।
ফলে তারা তাদের জন্য একপাল বকরি পারিশ্রমিক দিতে রাজি হলো। তখন একজন সাহাবি উম্মুল কোরআন (সুরা ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং মুখে থুতু জমা করে সেই ব্যক্তির গায়ে ছিটিয়ে দিলেন। ফলে সে রোগমুক্ত হয়ে যায়। এরপর তারা বকরিগুলো নিয়ে এসে বললেন, আমরা নবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করার আগে এটি স্পর্শ করব না। এরপর তারা এ বিষয়ে নবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন।
নবী (সা.) শুনে হেসে দিলেন এবং বলেন, তোমরা কিভাবে জানলে যে এটি রোগ সারায়? ঠিক আছে বকরিগুলো নিয়ে যাও এবং তাতে আমার জন্যও এক ভাগ রেখে দিয়ো। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৩৬)
এই ঘটনা থেকে জানা যায়, সুরা ফাতিহার দ্বারা ঝাড়ফুঁক দেওয়ার বদলে শর্তারোপ করাও বৈধ।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-এর সাহাবিদের একটি দল একটি কুয়ার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। কূপের পাশে অবস্থানকারীদের মধ্যে ছিল সাপে কাটা এক ব্যক্তি। তখন কূপের কাছে বসবাসকারীদের একজন এসে তাদের বলল, আপনাদের মধ্যে কি কোনো ঝাড়ফুঁককারী আছেন? কূপ এলাকায় একজন সাপ বা বিচ্ছু দংশিত লোক আছে। তখন সাহাবিদের মধ্যে একজন সেখানে গেলেন। এরপর কিছু বকরি দানের বিনিময়ে তিনি সুরা ফাতিহা পড়লেন। ফলে লোকটির রোগ সেরে গেল। এরপর তিনি ছাগলগুলো নিয়ে সাথিদের কাছে এলেন। কিন্তু তারা কাজটি পছন্দ করলেন না। তারা বললেন, আপনি আল্লাহর কিতাবের ওপর পারিশ্রমিক নিয়েছেন। অবশেষে তারা মদিনায় পৌঁছে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি আল্লাহর কিতাবের ওপর পারিশ্রমিক গ্রহণ করেছেন। তখন রাসুল (সা.) বলেন, যেসব জিনিসের ওপর তোমরা বিনিময় গ্রহণ করে থাকো, তন্মধ্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার সবচেয়ে বেশি হক আছে আল্লাহর কিতাবের। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৩৭)