যা কিছুই ঘটুক না কেন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যেন নির্বাচন হতে পারে সেজন্য সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটি জানান।
সেনাবাহিনীকে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে।
একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে দেশটি প্রথমবারের সামরিক শাসনের অধীনে আসে। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন, যার ফলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। ২০০৭ সালে আবার বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান হয়। তাদের সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর একটি নির্বাচন দেয়। যেখানে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ।
এপ্রসঙ্গে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেছেন, তিনি যে বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তারা রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমি এমন কিছু করব না, যা আমার বাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।’
এই সেনা কর্মকর্তা জানান, সরকার পতনের পর সংস্কারের অংশ হিসেবে সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং কয়েকজনকে এরই মধ্যে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
তবে এ নিয়ে বিস্তারিত তিনি কিছু বলেননি।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন বলেন, ‘যদি কোনো দায়িত্বরত সদস্য দোষী সাব্যস্ত হন, অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় কিছু সামরিক কর্মকর্তা আইনের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন বলেও স্বীকার করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ২০০৯ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া এমন প্রায় ৬০০ জনের অভিযোগ তদন্তের জন্য হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান তার সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে দূরে রাখতে চান। বর্তমানে বাংলাদেশে এক লাখ ৩০ হাজার সেনাসদস্য কর্মরত আছে। জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীর সদস্য সংখ্যা বিশ্বে ২য় সর্বোচ্চ।।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তখনই রাখা যেতে পারে যখন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে। এমন ব্যবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।’
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে, যা সাধারণত প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সাংবিধানিক সংস্কারের সময় এ বিষয়ে সংশোধন চান ওয়াকার-উজ-জামান।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিককে রাজনীতি করা উচিত নয়।’