ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইউনূসের ‘জাতিসংঘ জয়’, দুশ্চিন্তায় দিল্লি!

পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ইউনূসের সরকারকে বরণ করে নিয়েছে, তাতে এই সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নয়া দিল্লির নতুন মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে।
  • | ০২ অক্টোবর, ২০২৪
ইউনূসের ‘জাতিসংঘ জয়’, দুশ্চিন্তায় দিল্লি! বৈঠকে ড. ইউনূসের সঙ্গে হৃদ্যতা দেখান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিজেদের পছন্দের সরকারকে হটিয়ে তার দায়িত্ব গ্রহণকে শুরু থেকেই ভালো চোখে দেখেনি ভারত। এজন্য প্রায় দুই মাস কেটে গেলেও এখনো এই সরকারের সঙ্গে ‘স্বাভাবিক সম্পর্কে’ ফিরেনি দেশটি। এর মধ্যেই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়ে বাজিমাত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান।

সব রীতি ভেঙে জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেই বৈঠকে তিনি যে হৃদ্যতা দেখিয়েছেন সেটাও বিরল। জানিয়েছেন সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকবে। এছাড়াও জাতিসংঘ মহাসচিবসহ প্রভাবশালী দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা ড. ইউনূসকে যেভাবে বরণ করে নিয়েছেন, সেটা নজিরবিহীন। ড. ইউনূসের এই সফরকে অনেকেই ‘জাতিসংঘ জয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তবে ড. ইউনূসের সরকারকে নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা ভারতের জন্য তার ‘জাতিসংঘ জয়’ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ইউনূসের সরকারকে বরণ করে নিয়েছে, তাতে এই সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নয়া দিল্লির নতুন মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে। ভারতের প্রভাবশালী একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে ভারতের এই দুশ্চিন্তার কথা জানানো হয়েছে।  

বুধবার (২ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মাটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন রুখতে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ক্ষোভ বাড়ছে সাউথ ব্লকে। সে কারণে মুহাম্মদ ইউনূস চাইলেও জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে তার সঙ্গে বৈঠক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এড়িয়ে গেছেন। তবে মোদির সঙ্গে বৈঠক না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সিলমোহর নিয়ে সফল ভাবেই আন্তর্জাতিক দৌত্য সারলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। যা দিল্লির আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।

সাধারণ সম্মেলনে নিজে বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউনূস। পাশাপাশি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রধান এবং এডিবি-র শীর্ষকর্তার সঙ্গেও আলাদা করে আলোচনা হয়েছে তার। এই সব আলোচনার মূল সূর একটাই। শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের সরকারি নেতৃত্বের প্রতি পশ্চিমি দুনিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতা থাকবে ভবিষ্যতে। যে সহায়তার কৌশলগত, বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ভূমিকা রয়েছে। এক কথায়, ভারতের প্রতি দ্বিপাক্ষিক নির্ভরতার জায়গা সঙ্কুচিত করাই এই মুহূর্তে ইউনূস সরকারের লক্ষ্য কি না, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে কূটনৈতিক মহলে।

সাউথ ব্লকের চিন্তা বাড়িয়ে নিউ ইয়র্কে ইউনূসের দৌত্য তালিকা প্রসারিত হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গেও। সার্ক-কে জাগিয়ে তোলা ও বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে কথা হয় ইউনূস-শরিফের। কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০০ দিনে কাজকর্মের খতিয়ানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ না রাখলেও এই মুহূর্তে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের কৌশল রচনাই মোদি সরকারকে অগ্রাধিকারের মধ্যে রাখতে হবে।

পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বার্তা থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশ এখন তার নীতির কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীকে আরও বেশি করে রাখতে চাইছে। যা স্বস্তির নয় নয়াদিল্লির কাছে। আপাতত দুটি বিষয় স্পষ্ট। এক, এই অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক বৈধতা পেয়ে গেছে সে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে। দুই, ঢাকার সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক আগামী দিনে এগোলে তা নিয়ন্ত্রণ করার মতো কূটনৈতিক অস্ত্র এখনও ভারতের হাতে নেই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দিয়েছেন ইউনূস। এই বার্তাই তিনি দিতে চেয়েছেন, ক্ষমতারবদল হলেও তাকে শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ঠিক নয়। বাংলাদেশের জাতিসত্তার স্বকীয়তাতেই তিনি বিশ্বাসী।