হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিতর্কিত ১৩ দফা দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি পালনের নামে দিনব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছিলো। কেবল দিনটি নয়, এর পরেও নানা প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে বিতর্ক তৈরি করতে সব চেষ্টা দেখিয়েছিলো দলটি।
আর এর পালে হাওয়া দিয়েছিলো বিএনপি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সেদিন রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ২২ কর্মীসহ ৩৯ জন নিহত হয়েছিল। অবশ্য এদিন ‘শতশত হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছে’ দাবি করলেও এর স্বপক্ষে কোনও তথ্য প্রমাণ আজ পর্যন্ত উপস্থাপন করতে পারেনি সংগঠনটি।
সেই দিনটি স্মরণে ২০১৩ সালের পর কয়েক বছর ‘স্মরণ সভা’, ‘দোয়া মাহফিল’সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও এখন আর সেসব করতে চায় না। তবে বর্তমানে হেফাজতের চেষ্টা ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের সেই স্মৃতি ভুলে যেতে। এই দিনটি স্মরণে কোনও কর্মসূচিও রাখে না তারা।
২০১৩ সালে রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকের লিখিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। সে বছর ৪ মে লালবাগ জামিয়া কোরয়ানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ওই রূদ্ধদ্বার বৈঠকটি করেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যে কোনও মূল্যে ঢাকা ঘেরাও করা হবে এবং অবরোধ পরবর্তী সমাবেশ শেষে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। সংগঠনটি যদিও সেদিন দোয়া মাহফিল করতে শাপলা চত্বরে আসার কথা বলেছিল। হেফাজতের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর নির্দেশে শাপলা চত্বরেই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবস্থানের ঘোষণা দেন হেফাজতের প্রয়াত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।
অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাই হেফাজতের নেতৃত্বে। এ সংগঠনের প্রয়াত আমির মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে সামনে রেখে এই আন্দোলন শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে তা রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয়। ৫ মে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা হয়।
সেদিন মতিঝিল এলাকায় প্রায় ৮ ঘণ্টা তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতে বিজিবি, ব়্যাব ও পুলিশের যৌথ বাহিনী মতিঝিলকে ঘিরে অভিযান চালালে পিছু হটে তারা। ৮৩ মামলায় ৩ হাজার ৪১৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয় বলে জানায় পুলিশ সদর দফতর।
তবে সর্বশেষ ২০২১ সালে ২৭ ও ২৮ মার্চ দু’দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন বিরোধিতা করে বিক্ষোভ ও হরতালে সহিংস হয়ে ওঠে হেফাজত। বিভিন্ন কর্মসূচিতে ১৭ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়। এরপর হেফাজতের পুরাতন কমিটি বাতিল করা হয়। যদিও সারা দেশব্যাপী জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠন করার কথা বললেও কোন অগ্রগতি নেই।
হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, হেফাজত ৫ মে ভুলে যায়নি। বিভিন্ন কারণে এই দিনটিতে গতকয়েকবছর কোন পরিকল্পনা করা হয়নি। অনেক নেতা জেলে আছেন, জেলা পর্যায়ে কমিটি নেই। আগামীতে প্রয়োজন বুঝে কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী ৫ মে স্মরণে কোনো কর্মসূচি না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেন।