২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চান ঢালিউড তারকা শাকিব খান। ভারতের একটি অনলাইন গণমাধ্যমে সেই অভিনেতাই নিজেকে ‘অরাজনৈতিক মানুষ’ বলে দাবি করলেন। তিনি কি সত্যিই তাই? প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে কাজ ও ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন শাকিব খান। বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন কেমন আছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘খুব ভালো আছি। কোনো অসুবিধা নেই। আমি অরাজনৈতিক মানুষ। সবসময় দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে।’ তিনি কি সত্যিই দেশ ও মানুষের পক্ষে?
দেশে যখনই কোনো সংকট দেখা দেয়, প্রচারসচিবের মাধ্যমে ফেসবুকে একটি নিরাপদ পোস্ট দিয়ে অপেক্ষা করেন শাকিব খান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তার ফেসবুকে সে রকম একটি পোস্ট দেখা যায়। যা দেখে নিশ্চিত হওয়া কঠিন যে, তিনি স্বৈরাচারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, নাকি ছাত্র-জনতার পক্ষে। সেখানে লেখা হয়, ‘আমার প্রাণের বাংলাদেশ এভাবে রক্তাক্ত হতে পারে না। কারও মা-বাবার বুক এভাবে খালি হতে পারে না। যারা অভিভাবক পর্যায়ে আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ, এখনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এই সংকটের যৌক্তিক সমাধান বের করুন। সব ধরনের সংঘাতের সমাপ্তি চাই।’ তিনি সংঘাতের সমাপ্তি চাইলেও স্বৈরাচারের পতন চাননি। অথচ বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের বহু শিল্পী তখন মাঠ ও সামাজিক মাধ্যমে ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তারকাদের অনেকেই ছিলেন বাংলাদেশের ছাত্রদের পক্ষে।
ওই পোস্টের ষোলো দিন পর ছাত্র-জনতার বিজয় অর্জিত হলে ফেসবুকে কোনো পোস্ট দেননি শাকিব। বরং শহীদ মিনারে জড়ো হওয়া উল্লসিত জনতার একটি ছবি পোস্ট করেন। শাকিবের এসব পোস্ট থেকে তাকে অরাজনৈতিক বা দেশ ও মানুষের পক্ষের বলে ধরে নেওয়া কঠিন। এমনকি দেশ যখন বন্যায় ভাসছে, সর্বস্তরের মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তখনও শাকিবকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা শোনা যায়নি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোয়নয়ন নিতে চান শাকিব খান। ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর সে ঘোষণাও দেন। গাজীপুরের একটি আসন থেকে তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। পরদিন মনোনয়নের ফরম সংগ্রহের কথা। পরদিন অবশ্য তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘গতকাল পর্যন্তও নির্বাচন করার ইচ্ছে ছিল। দলীয় হাইকমান্ড থেকেও অনেকেই চেয়েছেন যেন নির্বাচনে অংশ নিয়ে সিনেমার পাশাপাশি দেশেরও সেবা করি। বিষয়টি নিয়ে আমার কয়েকজন শুভাকাঙ্খী ও ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রাথমিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু নির্বাচন করার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর আমার ভক্তদের অনেককেই কষ্ট পেতে দেখলাম। তারা চাচ্ছেন না নির্বাচন করি। ভক্তরা আপাতত আমাকে সিনেমা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে বলছেন।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে এক ভিডিওবার্তায় শাকিব বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি, তার আছে নিয়মনীতি-শৃংখলা। কিন্তু সবকিছুকে পেছনে ফেলে উজ্জলতর হয়ে উঠেছে একজন মমতাময়ী মায়ের আবেগ।’ নিমতলী অগ্নিকাণ্ডে দুই বোনের দায়িত্ব নেওয়া, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া ও অসুস্থ কবি-সাহিত্যিকদের পাশে দাঁড়ানোর উদাহরণ টেনে শাকিব বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে পরম মমতায় আগলে রেখেছেন তিনি। বিশ্বের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন মাদার অব হিউম্যানিটি।’