গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর এই প্রথম দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করেছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে অস্ত্র ও গোলাবারুদের যে চালান ইসরায়েলে পাঠানোর কথা ছিল, সেটি আপাতত পাঠানো হচ্ছে না বলে ইসরায়েলকে জানিয়েছেন ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা। তবে কেন এই দেরি, তা নিয়ে কিছু জানা যায়নি।
সিএনএন ও জেরুজালেম পোস্টসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলের দুই জন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস রোববার প্রথম এই সংবাদ প্রকাশ করে। পরে ইসরায়েল ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট নিজেদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের আকস্মিক এ পদক্ষেপে উদ্বেগ বোধ করছেন ইসরায়েরের কর্মকর্তারা। ঠিক কী কারণে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করা হলো তাও জানতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন। কারণ এই চালানটিতে জরুরি কিছু অস্ত্র আসার কথা ছিল।
কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা এখনও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের স্পষ্টভাবে কিছু বলছেন না বলে জানা গেছে। বাইডেন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল সিএনএন, কিন্তু তিনিও সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেছেন, ‘৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে শত শত কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক মাসে ইসরায়েলকে যত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, তা গত কয়েক দশকেও দেওয়া হয়নি। এবং শুধু হামাসই নয়, হিজবুল্লাহ ও ইরানকে মোকাবিলা করার জন্যও আমরা ইসরায়েলকে সহায়তা দিয়েছি এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।’
পরে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও যোগাযোগ করেছিল সিএনএন। কিন্তু দুই দপ্তরের কোনো কর্মকর্তা এ ইস্যুতে কথা বলতে রাজি হননি।
সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, মার্কিন অস্ত্র সরবরাহে দেরির পেছনে ইসরায়েলের সম্ভাব্য রাফা অভিযানের কোনো সম্পর্ক নেই। অস্ত্রের একটি চালান পাঠাতে দেরি হচ্ছে। অন্য চালান সময়মতো যাবে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, ৭ অক্টোবরের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক বিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ইসরায়েলে পাঠিয়েছে। এছাড়া ইরানি হামলা মোকাবিলায় অভূতপূর্ব সহযোগিতা করেছে। এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য যা কিছু দরকার যুক্তরাষ্ট্র তাই করবে।
তবে একইদিন জেরুজালেম পোস্ট জানায়, বাইডেন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত ইসরায়েল। অস্ত্রের যে চালানটি গত সপ্তাহে আসার কথা ছিল তা সরবরাহে দেরি হচ্ছে। ৭ অক্টোবরের পর এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটলো।
এদিকে এ ঘটনায় উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি কারণও জানতে চেয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের এই চালানটি এক পর্যায়ে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের কারণে আটকে গেছে। কারণ জানার জন্য বারবার চেষ্টা করা হলেও হোয়াইট হাউস বা মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলছেন না।
মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ইসরায়েলকে গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে বেসামরিক লোকজনের হতাহত হওয়া হ্রাস করা, গাজায় ত্রাণ-সামগ্রী প্রবেশে বাধা না দেওয়াসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে ওয়াশিংটন, কিন্তু ইসরায়েল সেসবে কর্ণপাত করেনি। সর্বশেষ গাজার দক্ষিনাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রাফাহতে অভিযান চালাতে নিষেধ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই নির্দেশনাও মানেনি ইসরায়েল।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীণ মন্ত্রিসভার ‘হুঁশ’ ফেরাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
সূত্র : এক্সিওস, নিউইয়র্ক পোস্ট