ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ফারুক আহমেদের স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ফারুক আহমেদের লিখেছেন, অঝোর ধারায় বৃষ্টি হলেই আমার হুমায়ূন ভাইয়ের কথা বেশি মনে পড়ে।
  • | ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
ফারুক আহমেদের স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদ অভিনেতা ফারুখ আহমেদ।
অভিনেতা ফারুক আহমেদ তার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন, যেখানে তিনি হুমায়ূন আহমেদেকে নিয়ে স্মৃতির কথা তুলে ধরেন। তিনি লিখেছেন বৃষ্টি হলেই লেখককে মনে মনে তার।

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ফারুক আহমেদের লিখেছেন, অঝোর ধারায় বৃষ্টি হলেই আমার হুমায়ূন ভাইয়ের কথা বেশি মনে পড়ে। তুমুল বৃষ্টি তিনি অসম্ভব ভালো বাসতেন। এক কথায় তিনি ছিলেন বৃষ্টি বিলাসী মানুষ। ঢাকা শহরে তুমুল বৃষ্টি দেখে হুমায়ূন ভাইয়ের স্মৃতি একে একে ছবির মতো আমার মনে পড়তে লাগলো। বাসায় এসে তাই তার স্মৃতি নিয়ে লিখতে বসলাম।

হুমায়ূন ভাই তখন কর্কট রোগে আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি কেমোথেরাপি নিয়েছেন। হঠাৎ তার মন ছুটে গেলো দেশের টানে। হুমায়ূন ভাই দেশে ফিরেই নুহাশপল্লী চলে গেলেন। সেখান থেকে ফোন এলো হুমায়ূন ভাই নতুন নাটক করবেন আমাকে লাগবে। আমি অবাক। একজন মানুষ কর্কট রোগে আক্রান্ত অথচ কি তার প্রাণশক্তি। নাটক লিখবেন, নাটক বানাবেন। পরদিন সকালবেলা আমি একরকম ছুটে গেলাম নুহাশপল্লী।

গিয়ে দেখি হুমায়ূন ভাই ড্রইংরুমে নাস্তা করছেন। আমাকে দেখেই তিনি অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে বললেন, ফারুক এসেছো? বসো। নাস্তা করো।  আমি তার কথায় বিস্মিত। একজন অসুস্হ মানুষ। কি স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেন। খেতে বসলাম। তিনি গল্প শুরু করলেন। তারপর বললেন, একটা নাটক লিখছি। নাটকের নাম "পিপীলিকা"। ফারুক তুমি এই নাটকে অভিনয় করবে। আগামীকাল থেকে সুটিং।

পরদিন থেকে নাটকের সুটিং শুরু হলো। সুটিংএর ফাঁকে গল্প। হুমায়ূন ভাইয়ের গল্পবলার ঢং ঠিক আগের মত। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়না তিনি এক কঠিন রোগে আক্রান্ত। এক বিকেলে সুটিং শেষ। তিনি তার প্রিয় লিচু গাছের  নিচে বসে গাছের দিকে তাকিয়ে  আছেন। ডালে ডালে পাঁকা লিচু ঝুলছে। তিনি দেখছেন। দূর থেকে বিষয়টা লক্ষ্য করলাম। আস্তে আস্তে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।

হুমায়ূন ভাই আমাকে দেখে বললেন, ফারুক বসো। তিনি বললেন, মুশাররফকে ডাকো। মুশাররফ নুহাশপল্লীর কেয়াটেকার আশেপাশেই ছিলেন। তিনি দৌড়ে এসে হুমায়ূন ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ালেন।  হুমায়ূন ভাই মুশাররফ ভাইকে বললেন, গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আমার কাছে নিয়ে আসো। মুশাররফ ছুটলেন ছেলেমেয়েদের খোঁজে। হুমায়ূন ভাই বললেন, এই যে  প্রকৃতি, জোছনা,বৃষ্টি, নদী কি সুন্দর! একদিন হয়তো এসব আর দেখতে পারবো না। একুশের বই মেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা সেখানে থাকবো না। কিছুক্ষণ পর হুমায়ূন ভাই স্বাভাবিক গলায় বললেন, কই মুশাররফ? নুহাশপল্লীর গেইট দিয়ে বারো চোদ্দজন ছেলেমেয়ে নিয়ে মুশাররফ ভাই দ্রুত হেঁটে  আসছেন।

হুমায়ূন ভাই মৃদু হেঁসে বললেন, শোন, তোমার কে কে গাছে উঠতে পারো হাত তুলো। গ্রামের ছয় সাত বছরের ছেলেমেয়ে। প্রায় সবাই হাত তুলে জানালো তারা গাছে উঠতে পারে। হুমায়ূন ভাই দেরি না করে বলা শুরু করলেন, তোমারা এই লিচু গাছে উঠবে। তারপর যত পারো লিচু  খাবে। আমি ওয়ান, টু,থ্রি  বলবো তোমারা লিচু গাছে উঠা শুরু করবে। মাঝারি সাইজের লিচু গাছ। ছেলেমেয়েরা অতি দ্রুত গাছে উঠে লিচু খাওয়া শুরু করলো। কেউ আবার পকেটে ভরছে। যে কয়জন গাছে উঠতে পারেনা তাদের জন্য নিচে ফেলছে। হুমায়ূন ভাই আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, শোন ফারুক একে বলে আকাশ সমান ভালোলাগা। একে বলে আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা।